সক্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন

প্রশান্ত কুমার বসাক |

জাতির ভবিষ্যত্ বিনির্মাণ হয় শ্রেণিকক্ষে অর্থাত্ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে; অথচ আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। ভর্তি, ফরম পূরণ আর পরীক্ষা কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ছাত্র উপস্থিতি খুবই কম এমনকী শিক্ষকরাও নিয়মিত হাজির হন না। এক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে ছাত্র-শিক্ষক উপস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমি ব্যর্থ’।

ভিশন ২০২১ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষ-কোটি টাকা ব্যয়ে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছিল তার অধিকাংশই এখন নিষ্ক্রিয় কোথাও নিশ্চিহ্ন। লাইব্রেরি নেই। লাইব্রেরি ব্যবহার অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। বিজ্ঞানাগার নামেমাত্র থাকলেও ব্যবহারিক ক্লাস হয় না; অথচ পরীক্ষায় পূর্ণ ব্যবহারিক নম্বর নিয়ে বিজ্ঞানের ছাত্ররা বিজ্ঞানের ব্যবহারিক জ্ঞানশূন্য হয়েই স্কুল-কলেজ জীবন শেষ করে। নেই কোনো ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। হয় না কোনো জাতীয় দিবস পালন—হয় না জাতীয় সংগীত, সমাবেশ। চলছে লাগামহীন নিয়োগ বাণিজ্য। মেধার বিবেচনা না করে ১৫/২০ বা ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা কমিটির সভাপতি, সদস্য, অধ্যক্ষ, প্রধানশিক্ষক আর শিক্ষক নেতারা করছেন আত্মসাত্। সম্প্রতি একটি খবরে দেখা গেল, দেশের ষাট হাজার শিক্ষক ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষকতা করছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে চলছে।

মানসম্মত শিক্ষক দ্বারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে না পারলে আমাদের কোনো লক্ষ্যই অর্জন করা সম্ভব হবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব বিষয়ে শুধু আনুষ্ঠানিক সভা-সেমিনার করলে হবে না। পরিবার, আদর্শ শিক্ষক, পরিকল্পিত শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিশু-কিশোরদের নিয়মিত গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে আন্তরিক পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মকে আলোকিত করা সম্ভব।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী করে মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের অবস্থা তো একই; অথচ এই দুই পর্যায়ের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা আর মান-মর্যাদার মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করেও তাঁদের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি একফোঁটাও। তা হলে উত্তরণের পথ কী? প্রত্যেক উপজেলার একটি করে কলেজ জাতীয়করণের কাজ চলছে আবার সকল প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের দাবিও উচ্চারিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানতেও চেয়েছেন যে, সকল প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে হলে কত টাকার প্রয়োজন। প্রশ্ন জাগে, জাতীয়করণ হলেই কি শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানগুলো কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখবে?

পরিশেষে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে না পারলে আমাদের যে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।

ঠাকুরগাঁও


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023770332336426