সরকারিকরণের পরই বেহালদশা স্কুলটির

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বালিয়ান ইউনিয়নের নয়নমণি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথম বছরই ভর্তি হয় ৪২০ শিক্ষার্থী। শুরু থেকে বেশ ভালোই চলছিল বিদ্যালয়টি। কিন্তু ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সরকারিকরণ পরই শুরু হয়েছে অধঃপতন। শিক্ষক নিয়োগ জটিলতায় পাঠদান হয়ে গেছে অনিয়মিত। শিক্ষার্থী কমতে কমতে ৯৭ তে ঠেকেছে। তাদের মধ্যেও অধিকাংশ অনিয়মিত। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণ টিনশেড ঘরে মাটিতে ছেঁড়া চট বিছিয়ে ক্লাস করছে শিশুরা। পানি, বিদ্যুৎ ও টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই। নিয়মিত শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। আরো কয়েকজন শিক্ষক থাকলেও আইনি জটিলতায় তাদের বেতন বন্ধ আছে। এ কারণে তারা শুধু হাজিরা দিয়ে চলে যান।

অভিভাবক আনোয়ার হোসেন বলেন, একজন মাত্র শিক্ষক নিয়মিত আসেন, তিনি কয়েকটি ক্লাস করান। পুরনো শিক্ষকরা বেতন পান না বলে ক্লাস করান না। তারা হাজিরা দিয়ে চলে যান। ছেলেমেয়েরাও ভাঙাচোরা স্কুলে যেতে চায় না। এখন উপবৃত্তি চালু আছে বলেই ক’জন ছাত্র আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারিকরণের আবেদনের সময় প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে চারজনের স্থলে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। পদ না থাকার পরও শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় ২০১৪ সালে বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলেও সব শিক্ষকের বেতন-ভাতা আটকে যায়। এ কারণে শামীমা ইয়াসমীন নামে একজন সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মামলা করেন। মামলার পর থেকেই প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এখন তিনি অসুস্থতার কারণে ছুটি চেয়েছেন বলে জানা গেছে।

বালিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ফরিদা ইয়ামিন জানান, দুই বছর ধরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন না। শিক্ষকদের বেতন না থাকায় তারাও পাঠদানে আগ্রহ দেখান না। অবকাঠামো না থাকার কারণে বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশও নেই। দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলবাড়িয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন আরা বেগম বলেন, এ স্কুলটি নিয়ে খুব বিপদে আছি! মামলা থাকার কারণে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। শিক্ষকরা বেতন পান না। প্রধান শিক্ষক অসুস্থ। তিনি ছুটির দরখাস্ত দিয়েছেন। হেলথ সার্টিফিকেটও দিয়েছেন। আমি নিয়মিত বিদ্যালয় মনিটরিং করছি। মোজাম্মেল হক নামে একজন সহকারী শিক্ষক দিয়েছি। তিনি পড়াচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীরা উপবৃত্তি পাচ্ছে। ভবনের জন্যও আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভবনের চাহিদা-সংবলিত তালিকা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, শিক্ষকদের বেতন না হওয়া এবং মামলার কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভবন হলেই অন্যান্য সুবিধা দেয়া যাবে। আমরা ল্যাপটপ ও মোবাইল দিতে পারব। বেঞ্চসহ আসবাবের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে।

ঘুষ নিয়ে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ ও বর্তমান জটিলতার বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের সেলফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মামলা হওয়ার পর থেকেই তার সেলফোনটি বন্ধ থাকছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030269622802734