সরকারি প্রাথমিকের ডাবল শিফট তুলে দেয়ার উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডাবল শিফট তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বছর থেকে স্বল্পসংখ্যক স্কুলে হলেও এক শিফট চালু করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে সব স্কুল থেকে ডাবল শিফট তুলে দেওয়া হবে। সারাদেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে দুই শিফটে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রথম শিফটে ক্লাস চলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় শিফটে চলে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। ক্লাস চলে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত। অবশ্য রাজধানীর স্কুলগুলোতে ক্লাস চলে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল পৌনে ৩টা পর্যন্ত। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রথম শিফট এবং ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৩টা পর্যন্ত দ্বিতীয় শিফট।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বিষয়ে আকরাম-আল-হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই শিফটে ক্লাস নেওয়ার কারণে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বেশি সময় দিতে পারেন না। তাই আমরা সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিফট চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। অল্প কিছু স্কুল দিয়ে শুরু করলেও আগামী বছর থেকে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আরো বলেন, ‘পিডিইপি-৪-এর আওতায় আমরা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন করে ৬৪ হাজার ক্লাসরুম নির্মাণ করব। এতে করে আর বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকবে না। এ ছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুসারে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষকও নিয়োগ করব আমরা। ক্লাসরুম আর শিক্ষক সংকট না থাকলে সব স্কুলে আমরা এক শিফট চালু করতে পারব।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি স্কুলের জন্য প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার আওতায় দৃষ্টিনন্দন স্কুল ভবন নির্মাণ হবে। শিক্ষার্থীদের আনন্দের সঙ্গে পড়ালেখার সব ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তত ঢাকার স্কুলগুলোর অবকাঠামো সংকট দূর হবে।’

দুটি কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই শিফটে ক্লাস নিতে হয়। প্রথমটি ক্লাসরুম সংকট। দ্বিতীয়টি শিক্ষক সংকট। শিক্ষকরা দুই শিফটে ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারছেন না। ফলে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসের পড়া ঠিকমতো আত্মস্থ করতে পারছে না।

দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৯৩টি। এর মধ্যে বেশির ভাগ স্কুলে কক্ষের সংখ্যা চারটি। এর মধ্য থেকে একটি কক্ষ ব্যবহৃত হয় শিক্ষকদের বসার রুম হিসেবে। বাকি তিনটি কক্ষে চলে ক্লাস। বেশির ভাগ স্কুলে শিক্ষকসংখ্যা চার থেকে পাঁচজন। এর মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষক, যাকে জেলা-উপাজেলা পর্যায়ে নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ক্লাস নেন তিন থেকে চারজন শিক্ষক। এর মধ্যে আবার কোনো না কোনো শিক্ষক ছুটিতে থাকেন। ফলে একসঙ্গে তিনটির বেশি ক্লাস চালানোর সক্ষমতা স্কুলগুলোর নেই। কিন্তু প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি ক্লাস আছে। তাই শ্রেণিগুলোকে দুই ভাগ করে দুই শিফটে স্কুল চালাতে হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে।

তবে অনেক স্কুলে পুরনো ভবনের পাশাপাশি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ক্লাসরুমের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু নির্মাণ ত্রুটির কারণে নতুন ভবনগুলো ১৫ থেকে ২০ বছরের বেশি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে অনেক স্কুলে বেশি ক্লাসরুম থাকার কথা হলেও বাস্তবে তা নেই।

শিক্ষকরা জানান, গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে জায়গার অভাব নেই। সেখানে একাধিক ভবন করে শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর করা যাবে। আর শহরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে ক্লাসরুমের সংকট কাটাতে পাঁচ-ছয়তলা ভবন নির্মাণ করতে হবে। আর যে ভবনই নির্মাণ করা হোক, তা যেন কমপক্ষে ৫০ বছর টেকসই হয়। না হয় ক্লাসরুম নির্মাণের কিছুদিন পরই আবার শ্রেণিকক্ষ সংকটে পড়তে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039029121398926