স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলক মন্ত্রীর ‘বিজয়’

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত স্মার্টফোন বাজারজাতকরণের আগে বিজয় কি-বোর্ড অ্যাপ ইনস্টল করার নজিরবিহীন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে প্রায় ১৫ লাখ স্মার্টফোন। মোবাইল ফোন আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারকদের উদ্দেশে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দেওয়া ওই চিঠি এরই মধ্যে বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এমন নির্দেশনাকে নজিরবিহীন, অযৌক্তিক এবং অবৈধ বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পুরো বিষয়টিতে ‘যদি-কিন্তুর’ কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন বিজয় কি-বোর্ডের উদ্ভাবক এবং বর্তমান সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

বিজয় কি-বোর্ড ইনস্টল না থাকলে স্মার্টফোন বাজারজাতকরণে অনাপত্তি দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছে বিটিআরসি। ফলে এরই মধ্যে প্যাকেজিং হয়ে বাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা স্মার্টফোনগুলোকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শাহীদ বলেন, বিষয়টি এখনো পর্যালোচনা করে দেখছি। এভাবে একটি অ্যাপ যুক্ত করতে হলে গুগলের সার্টিফিকেশন দরকার হয়। যে স্মার্টফোনগুলো তৈরি অবস্থায় স্টকে রয়েছে সেগুলোতে এই অ্যাপ যুক্ত করে গুগলের সার্টিফিকেশন নেওয়া বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া। আবার হ্যান্ডসেট গ্রাহকের কাছে যাওয়ার পর আপডেট দিয়ে অ্যাপটি ইনস্টল করে দিলাম, সেটিও সম্ভব নয় এ নির্দেশনা অনুযায়ী। তাই স্টকে থাকা প্রায় ১৫ লাখ স্মার্টফোনকে ‘লক পিরিয়ড’ হিসেবে বিবেচনা করে এগুলো বাজারজাতকরণে বিটিআরসির সঙ্গে আমরা কথা বলব।

বিষয়টিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন খোদ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে লিখিত বার্তায় পলক লেখেন, এটি উচিত হবে না, অযৌক্তিক।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত মাসে বিটিআরসিতে একটি সভায় স্মার্টফোনে বাংলা টাইপ করার জন্য যে কি-বোর্ড ইনস্টল করা থাকে তা নিয়ে কথা হয়। সেখানে বিজয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। আর এ নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষমতা কমিশনের নেই। কমিশন কিন্তু এটিও বলেনি যে, সরকারের নির্দেশে বিজয় কি-বোর্ড ইনস্টল থাকার কথা বলা হয়েছে। পুরো বিষয়টি মোস্তাফা জব্বারের স্বার্থের জন্য। তিনি মন্ত্রী হওয়ার সময় শপথ নিয়েছিলেন যে, তিনি কোনো লাভজনক পদে থাকবেন না; কিন্তু তিনি বিজয়ের লাভ ভোগ করছেন।

বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তে স্বার্থের দ্বন্দ্বের প্রভাবের ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, যদিও বিনামূল্যে এপিকে ফাইল সরবরাহ করা হচ্ছে, একাধিক কারণে এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ। এভাবে তিন দিনের নোটিশে কোন বৈজ্ঞানিক ও ব্যবসায়িক যুক্তিতে এবং কী প্রক্রিয়ায় এ সিদ্ধান্ত আমদানিকারক ও উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ করে ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো? যদি বিজয় কি-বোর্ড ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়, তাহলে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত পছন্দের কি-বোর্ড ব্যবহারের অধিকার যেমন লঙ্ঘিত হবে, তেমনি সংশ্লিষ্ট বাজারে বিজয় কি-বোর্ডের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। অতএব এর ফলে প্রযুক্তির প্রসার ও উৎকর্ষ যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি এ সিদ্ধান্তে স্বার্থের দ্বন্দ্বের প্রভাবের ঝুঁকি রয়েছে বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে এর পুনর্বিবেচনা করা অত্যাবশ্যক।

এদিকে পুরো বিষয়টি দেশে প্রচলিত প্রতিযোগিতা আইন ২০১২-এর পরিপন্থি বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিজয় কি-বোর্ডের পাশাপাশি অভ্র, লিপিকার, ইজিলার্ন বাংলা, অক্ষর, স্বরচক্র এবং গুগল বাংলা কি-বোর্ডও মোবাইলে ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিযোগিতা আইন ২০১২-এর ৪, ৮, ১৫ ও ১৬ ধারা অনুসারেও একক মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ কারও নেই। তাই আমি মনে করি, মোবাইলে বাংলা কি-বোর্ড রাখা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে, তবে সেটি শুধু বিজয় কি-বোর্ড নয়।

সার্বিক বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় নেই। আমার কি-বোর্ড যদি সরকার স্ট্যান্ডার্ড বানায়, আমি কী করব? আর কোনো অ্যাপকে স্ট্যান্ডার্ড বানায়নি সরকার। আর এই অ্যাপ গ্রাহক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক নয়। কেউ যদি মনে করে, হ্যান্ডসেট কেনার পর বিজয় ফেলে দিয়ে আরেকটা ব্যবহার করবে, কেউ তাতে বাধা দেবে না। কাজেই এখানে কোনো যদি-কিন্তু নেই। এটি আমদানিকারক এবং প্রস্তুতকারকদের জন্য বাধ্য করা হয়েছে কারণ হ্যান্ডসেটে একটি বাংলা কি-বোর্ড থাকতে হবে। যেকোনো একটি দিয়ে দিলে তো হবে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.017534017562866