হল বন্ধ থাকায় সংকটে ইবি শিক্ষার্থীরা

ইবি প্রতিনিধি |

সেশনজট নিরসনে দীর্ঘ ১৭ মাস পর সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে অসমাপ্ত ও বন্ধ থাকা পরীক্ষাগুলো নিতে শুরু করেছে অন্তত ২৩টি বিভাগ। কিছু বিভাগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্যাম্পাসমুখী হয়েছে শিক্ষার্থীরা। হল বন্ধ থাকায় আবাসন গড়েছে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ শহর ও ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায়। নিকটবর্তী জেলার অনেকেই আবার পরীক্ষা দিতে আসছে বাড়ি থেকেই। এমন অবস্থায় আবাসন, খাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন সংকটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

আবাসন সংকট : বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩৪টি বিভাগে অন্তত ১৬ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর এক-তৃতীয়াংশ থাকে ক্যাম্পাসের ৮টি আবাসিক হলে, এক-তৃতীয়াংশ ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শান্তিডাঙ্গা-শেখপাড়া এলাকায়, আর এক-তৃতীয়াংশ অবস্থান করে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা শহরে। হল বন্ধ থাকায় এই এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী ও দুই জেলা শহরে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর নতুন করে আবাস সুবিধার প্রয়োজন হচ্ছে। তাই মেস ও বাসাগুলোতে ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। তিন সিটের রুমে পাঁচজন থাকা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খাওয়ার সমস্যা : শিক্ষার্থীরা আবাসন কোনোভাবে চালিয়ে নিতে পারলেও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। অতিরিক্ত এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর প্রায় ৯০ ভাগই চড়া মূল্যে বাসা ভাড়া করে থাকছে। সেখানে রান্নার সুযোগ, সরঞ্জাম ও কাজের লোক নিয়ে পড়তে হচ্ছে মহা ঝামেলায়। সরঞ্জাম অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে কিনলেও অনেক কষ্টেও মিলছে না গৃহকর্মী। ফলে আশপাশের হোটেল থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার চড়া মূল্যে খেতে হচ্ছে। দু-একটি ভালো হোটেল থাকলেও সেখানে এক দিনের খাবারের জন্য ব্যয় হয় অন্তত দুইশ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য হোটেলে তিনবেলার খাবারের জন্য শিক্ষার্থীদের অন্তত দেড়শ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি : গাদাগাদি করে রাতযাপন, অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজনের তাগিদে অনিয়ন্ত্রিত ঘোরাফেরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেছে শিক্ষার্থীদের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার হলে বসলেও কেন্দ্রের বাইরে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। ফলে কর্তৃপক্ষের গৃহীত ব্যবস্থা ফলপ্রসূ না হওয়ার আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। ক্যাম্পাস বাস বা গণপরিবহনেও নূ্যনতম স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ নেই শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া মশা, সাপ ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় পরীক্ষার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিতেও সমস্যায় পড়ছে তারা।

নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা : আবাসন সংকটের জন্য ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকার গ্রামের দিকে বা কম জনবহুল এলাকায় আশ্রয় নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ছাত্রীরাও জরাজীর্ণ বাসা বা মেসে উঠছে। অনেকের মেসের জানালা ভাঙা, গেট নেই, টিনশেডের বাসায় বাঁশের ছাদ ভেঙে পড়ার অবস্থা, বখাটেদের উৎপাত, চুরি-ছিনতাইয়ের আশঙ্কাসহ নানাবিধ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। ভবিষ্যৎ গড়তে এসে জীবন হুমকির মুখে পড়ছে তাদের। অনেক মেসে হয়রানির শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা।

এসব বিষয়ে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক বলেন, হুট করে পরীক্ষার তারিখ দিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ক্যাম্পাস থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে একটা মেস পেলাম। স্যাররা বলল, ফরম ফিলাপ না করে পরীক্ষা দিতে দেবে না। মেসের জন্য এতগুলো টাকা খরচ হলো। ফরম ফিলাপের পর্যাপ্ত সময়ও পাচ্ছি না। এদিকে পরীক্ষার প্রস্তুতি। সব মিলে পাগল হওয়ার উপক্রম। হল খুলে দিলেই সমস্যাগুলো সমাধান হতো।

উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের আমরা ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকা নিবন্ধনের জন্য বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে হল খুলে দেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004755973815918