হিন্দি সিনেমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অ*স্ত্র রাখেন শিক্ষক রায়হান

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

বলিউডের খ্যাতিমান অভিনেতা নানা পাটেকর। তাঁর সুপারহিট সিনেমা ‘অব-তক ছপ্পান’। এই চলচ্চিত্রে ‘ইন্সপেক্টর সাধু আগাশ’-এর চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। তবে এবার বলিউডে নয়, সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রকে ক্লাসে গুলি করা শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ এ চরিত্রে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ওই সিনেমা দেখার পর থেকেই অস্ত্র ও গুলির কেনার ‘নেশা’ হয় তাঁর। শখের বশে অস্ত্র-গুলি ও চাকু কিনে সংগ্রহ করতেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আরও কিছু অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা ছিল এ শিক্ষকের। তবে গ্রেফতার হওয়ায় সেই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না রায়হানের। গতকাল বৃহস্পতিবার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এসব চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে।  

ফাইল ছবি

গ্রেফতার মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হানকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে।  

গত ৪ মার্চ বিকেলে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন তিনি। ফরেনসিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিডিউলবহির্ভূত পাঠদান নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে ছাত্রকে গুলি করা হয়। এর পর ওই চিকিৎসককে অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর পর পুলিশ তাঁকে আটক করে। আটকের পর তাঁর কাছ থেকে সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের দুটি অবৈধ বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু জব্দ করে পুলিশ। এই ঘটনায় রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। এরই মধ্যে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। 

মামলার তদন্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কেন কী কারণে একজন শিক্ষক হয়েও রায়হান শরীফ অস্ত্র-গুলি নিজের সংগ্রহে রাখতে গেলেন, তার প্রকৃত কারণ বের করার চেষ্টা করা হয়। তিনি পুলিশকে জানান, নানা পাটেকরের ‘অব-তক ছপ্পান’ সিনেমা দেখার পর থেকে তাঁর মনোজগতে এক ধরনের পরিবর্তন তৈরি হয়। অস্ত্র ও গুলি কিনে নিজের হেফাজতে রাখার ইচ্ছা পোষণ করতে শুরু করেন। এর পর অনেক দিন ধরে রায়হান অস্ত্রের ব্যাপারে খোঁজ নেন। তবে উপযুক্ত সোর্স না পাওয়ায় দীর্ঘদিন তাঁর পরিকল্পনা সফল করতে পারছিলেন না। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে কুষ্টিয়ার এক অস্ত্র কারবারির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। পরে কারবারির মাধ্যমে কেনাকাটার ব্যাপারে সব কিছু চূড়ান্ত হয়। রায়হান নিজে কুষ্টিয়ায় গিয়ে প্রথম দফায় একটি অস্ত্র কেনেন। এর পর ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বার কুষ্টিয়া গিয়ে একই ব্যক্তির কাছ থেকে আরেকটি অস্ত্র নেন।  তখন ওই অস্ত্র কারবারি তাঁকে জানান, কম  দামে গুলিও পাওয়া যায়। এর পর গুলিও কেনেন। অস্ত্রের জোগানদাতাকে ধরতে এরই মধ্যে ফাঁদ পাতা হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন থেকে বিদেশি চাকু কিনেন তিনি। 

পুলিশের পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, অস্ত্র ব্যবহার করে অবৈধ কোনো কাজ হাতিয়ে নেওয়ার ছক রায়হানের ছিল– এমন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কেন লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্র কেনার মতো গুরুতর অপরাধে জড়ালেন, এর কোনো সুদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে একাধিকবার দাবি করেন, লাইসেন্স নেওয়ার ইচ্ছা তাঁর ছিল। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ছাত্রকে গুলি করার মতো ঘটনায় রায়হান এখন অনুতপ্ত।

এ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন গুলিতে আহত শিক্ষার্থীর বাবা। অবৈধ অস্ত্র হেফাজতে রাখার কারণে আরেকটি মামলা করে পুলিশ।  

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, অবৈধ অস্ত্রের সোর্সকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সেটাতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পেয়েছি। যার কাছ থেকে রায়হান শরীফ অস্ত্র কিনেছিলেন, সেই ব্যক্তি পেশাদার অস্ত্র কারবারি। 

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, অস্ত্র কারবারিদের ব্যাপারে সব ধরনের তথ্য বের করতে প্রয়োজনে রায়হান শরীফের মোবাইল ফোনসেটসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এখন পর্যন্ত রায়হানের কাছে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে একজনের নাম পাওয়া গেছে। এই চক্রে আরও কেউ রয়েছেন কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে।  

পুলিশ জানায়, অবৈধ অস্ত্র বহন ছাড়াও শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে আরও কোনো অভিযোগ শিক্ষার্থীরা জানালে তার তদন্ত করা হবে। এরই মধ্যে কেউ কেউ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা নানা ভিডিও যাচাই করে দেখছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।  অসদাচরণের জন্য বিভিন্ন সময় রায়হানকে দু’বার শোকজ করা হয়। এ ছাড়া তাঁকে স্বজনের মাধ্যমে কাউন্সেলিং করানো হলেও তা কোনো কাজে আসেনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড - dainik shiksha ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি - dainik shiksha ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট - dainik shiksha মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা - dainik shiksha অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল - dainik shiksha ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024330615997314