৩০ লাখ টাকায় চুক্তি, অযোগ্য প্রার্থীকে অধ্যক্ষ নিয়োগের সাজানো পরীক্ষা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

হঠাৎ টেলিফোনে কয়েকজন প্রার্থী জানতে পারলেন ২৪ ঘন্টা পর পরীক্ষা। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর দুইটার সেই সাজানো পরীক্ষায় কতজন অংশ নেবেন তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। তবে, কে হবেন অধ্যক্ষ তা কিন্তু জানা। এই উচ্চমূল্যের তথ্যটি জানেন মাত্র তিন ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কঠোর গোপনীয়তায় ৩০ লাখ টাকায় রফা। অগ্রিম কিছু দেয়া হয়েছে। বরাবরের মতোই মোটা খামের বিনিময়ে সাক্ষী গোপাল মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রতিযোগীতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সরকারি তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ। এই উপাধ্যক্ষই পরে বলবেন বেসরকারি কলেজে অযোগ্যরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু ব্যাখ্যা করবেন না ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে তার খামটা কত মোটা ছিলো বা নিয়োগবোর্ডে তিনি কী ভূমিকা পালন করেছিলেন। 

অধ্যক্ষ নিয়োগের এই নাটকটি মঞ্চস্থ হবে ঢাকার কদমতলী থানাধীন দনিয়ার এ কে হাইস্কুল এন্ড কলেজে। দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষ নেই। কলেজেরই একজন প্রভাষককে গোঁজামিল দিয়ে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্যই এই নাটক। স্থানীয় এমপিপুত্রই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের হর্তাকর্তা। তারাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে টাকা খরচ করে সুদূর তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষকে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি নিয়ে এসেছেন। একে স্কুল এন্ড কলেজের নিকটতম প্রতিবেশী পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ অথবা সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ অথবা বদরুন্নেছা সরকারি কলেজ অথবা ইডেন কলেজ থেকে দনিয়ার এই কলেজের নিয়োগ বোর্ডে  ডিজির প্রতিনিধি হওয়া যুক্তিসংগত ছিলো। কিন্তু যিনি এই প্রশ্ন করবেন তিনিও তো ভিকারুননিসাসহ বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে জালিয়াতি করে ধরা খাওয়া।

কী মজা এই কলেজে? দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ফান্ডে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। এর আগে একে হাইস্কুল এন্ড কলেজ ফান্ডের কোটি কোটি টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কয়েকমাস জেল খেটেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও বরখাস্ত অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভুইয়া। তার সঙ্গে একই কলেজের প্রধান করণিক ইকবাল হোসেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। কলেজ ফান্ডের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বাংলামেটরে সেলিম ভুইয়ার অটোপার্টসের দোকানের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। সেলিম ভূইয়াকে সর্বাত্মক সহায়তা করে  আসছেন সংবাদপত্রের কার্ড ও টেলিভিশনের বুমধারী কতিপয় শিবিরকর্মী। 

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে সেলিম ভুইয়া অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। ওই সময়ে তিনি একটি দৈনিক পত্রিকারও মালিক ও সম্পাদক বনে যান। ঘুপচি বিজ্ঞাপন নিয়ে টাকা কামান বেসুমার। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পত্রিকাটি নিয়মিত বের হচ্ছে না। এখন তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদক ও মালিক। অধ্যক্ষ হিসেবে অবৈধ নিয়োগ ও সনদে ঘাপলা থাকা ও টাকা মেরে দেয়াসহ বিভিন্ন কারনে বরখাস্ত থাকা অবস্থায় গত বছর অবসরে যান তিনি। 

অধ্যক্ষ হওয়ার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলেও  বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামী ড. এম ওসমান ফারুকের সহায়তায়  একে স্কুলের অধ্যক্ষ হন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ও অপর একটি অডিট ফার্মের করা অডিটে ধরা পড়েছে সনদ ও অভিজ্ঞতায় গলদের ঘটনা এবং কলেজের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা।  পুলিশের তদন্তেও প্রমাণ মেলে অভিযোগের। পরে মামলা দায়ের করা হয়।

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য-সচিব থাকাকালে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সেলিম ভুইয়ার বিরুদ্ধে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জমা করা  ও সরকার কর্তৃক দেয়া চারশ কোটি টাকা রাষ্ট্রায়াত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে তুলে বিতর্কিত বেসরকারি ওরিয়েন্টালসহ দুটি বেসরকারি ব্যাংকে জমা করেন সেলিম ভুইয়া ও মুগীস উদিদন মাহমুদ। 

আজকের নিয়োগ নাটকে যাকে অধ্যক্ষ করা হচ্ছে তিনিও সেলিম ভুইয়ারই পরীক্ষিত লোক। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030741691589355