৬৩ জেলায় নেই কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের যন্ত্র

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র বা ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু করোনার চিকিৎসায় এ সুবিধা রয়েছে শুধু রাজধানীতেই। বাকি ৬৩ জেলায় ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তবিবুর রহমান।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৫১৫টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৫০টি। ঢাকার মোট পাঁচটি হাসপাতালে এ ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এ পাঁচটি হাসপাতালে মোট ২৯টি ভেন্টিলেশন সুবিধা আছে। করোনা রোগীর চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে কোনো আইসোলেশন ইউনিটে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন সুবিধা দেয়া হয়নি।

বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দীর্ঘ হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৯৭টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচজন। ভাইরাসটি মোকাবেলায় রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা বলা হলেও আদতে তা কতটুকু রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, যেভাবে করোনা রোগী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শনাক্ত হচ্ছে, তাতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা খুবই উদ্বেগের। যদি অতিদ্রুত করোনা রোগীদের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও ১০০টি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে এ ভেন্টিলেটরগুলো ঢাকার বাইরে ব্যবহার করা হবে কিনা, তা এখন নিশ্চিত নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, একটি দেশের হাসপাতালে রোগীর জন্য যতগুলো শয্যা রয়েছে, তার ১০ শতাংশ আইসিইউ থাকার কথা। তবে এটি সম্ভব না হলে ন্যূনতম ৪ শতাংশ থাকতে হবে। সে হিসেবে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় সব মিলিয়ে রোগীর শয্যা রয়েছে ৩১ হাজার ২২০টি। হিসাব অনুযায়ী এসব হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর থাকার কথা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। ন্যূনতম ধরলেও এর সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ১২শর মতো। তবে এসব হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউ রয়েছে মাত্র ২২১টি, যার সবগুলোতে ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ (১০ শতাংশ) মানুষের করোনা সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এর ১ শতাংশও আক্রান্ত হয়, তবে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কোনো সক্ষমতা থাকবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগীকে আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হতে পারে। এসব রোগীর শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি দিতে প্রয়োজন ভেন্টিলেটর। সেই তুলনায় ভেন্টিলেটর সক্ষমতা আমাদের কোথায়? জনসংখ্যা তত্ত্বের ওপর বিচার করলে দেশে ভেন্টিলেশন সুবিধা একেবারেই কম।  করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর

বেডের সংখ্যা শিগগিরই বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রস্তুত রাখতে হবে। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে করোনা মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।

বিএসএমএমইউর সাবেক এ উপাচার্য আরও বলেন, দেশে বর্তমানে কতজন করোনা রোগী রয়েছে, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। মাত্র ৭০০ মানুষের পরীক্ষা করে ৩৯ জন শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকসংখ্যক লোকের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেছে।

এর আগে গত ২১ মার্চ প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের জরুরি সেবা দেয়ার জন্য ১০০টি আইসিইউর কথা জানিয়েছিলেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৫০০ ইউনিট স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। কিন্তু কবে তা প্রস্তুত করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে বলেননি।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. আমিনুল হাসান বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০টি আইসিইউ বেড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি ভেন্টিলেটর স্থাপনের কাজ চলছে। করোনা পরিস্থিতি সার্বিক বিবেচনা করে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩৯ ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত করা গেছে। যাদের আইসোলেশনে রেখেছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে মারা গেছে মোট পাঁচজন। গতকাল পর্যন্ত নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034570693969727