‘রামছাগলের পাঠশালা’ কেনার নির্দেশ মানবেন না শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অখ্যাত কোনও লেখকের কোনও বই কিনবেন না প্রাথমিক শিক্ষকরা। সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা এ বিষয়ে এককাট্টা মনোভাব প্রকাশ করেছেন। শিগগিরই তারা বই কেনার আদেশ নিয়ে গণশিক্ষা সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে দেখা করবেন। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা মো: জাহিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

জানা যায়, মৌসুমী মৌ নামের একজন অখ্যাত লেখিকার তিনটি ছড়াগ্রন্থ ও আরেকজন নামধারী কবির একটি বই বাধ্যতামূলকভাবে কিনে সংরক্ষণ করতে সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকরা চিঠির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়ার পরপরই সমালোচনা শুরু হয়েছে। এর একটি হচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর এবং অন্যটি মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর।  সমালোচনার মুখে ওই দুই অখ্যাত লেখকের চারটি বই কিনে সংরক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে তা দুটি অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তাই জানেন না বলে দাবি করেছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মনজুর কাদের সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন,  তার দপ্তর থেকে কীভাবে মৌসুমি মৌ-এর ছড়ার বই কেনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। ওই লেখিকাকেও তিনি চেনেন না। তিনি জানান, তিনি এ-সংক্রান্ত নথি তলব করেছেন। সব দেখে বই কেনার নির্দেশনা বাতিল করবেন বলেও জানান তিনি। 

সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মৌসুমি মৌ নামে এক কবির তিনটি ছড়ার গ্রন্থ ‘বাংলা ছেড়ে ভাগ’, ‘রামছাগলের পাঠশালা’ ও ‘জাগরণ আসবেই’ এবং কুমার সুশান্ত সরকার নামে আরেক কবির লেখা ‘অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু ও সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ নামে একটি বইটি কিনে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করে একটি পত্র দেয়া হয় গত ৭ জুলাই।

অধিদপ্তরের পরিচালক ও যুগ্মসচিব (পলিসি ও অপারেশন) স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষার বিভাগীয় উপপরিচালক, সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সুপারিনটেনডেন্ট (সব) ও থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে (সব) পাঠানো হয়। কয়েকটি উপজেলায় এই বই কেনা হলেও অধিকাংশ শিক্ষক  দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন, ‘আমরা এইসব অখ্যাত লেখকের বই কিনবো না।’ 

একইভাবে গত বছরের ২০ নভেম্বর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেশের সব জেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়; যাতে নির্দেশনা দেয়া হয় কুমার সুশান্ত সরকারের ‘অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ ও ‘নারী যখন প্রতিবাদী’ বই দুটি কিনে বইয়ের কমপক্ষে ১০টি করে কপি জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা এবং উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষণ করার জন্য। এ চিঠি পাওয়ার পর দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে বই দুটির ১০টি করে কপি সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ বই সম্পর্কে জানতে চাইলে কয়েকজন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাক ডোর দিয়ে এসব বই কেনা হয়েছে।

জানা যায়, এ দুই কবির সম্পর্কে কেউই কিছু জানেন না। কুমার সুশান্ত সরকার নামে যে কবির দুটি বই মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও একটি বই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর কেনার নির্দেশনা দিয়েছে সেই কবির কোনো পরিচিতিই তার বইয়ে নেই।

কুমার সুশান্তের লেখা ‘অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইটি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের একুশে বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয়। ওই বছর ২৬ মার্চ দ্বিতীয় মুদ্রণ হয়, এরপর তৃতীয় মুদ্রণ হয় অক্টোবরে। আর চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম ও দশম মুদ্রণ হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। বইটির গায়ের মূল্য হচ্ছে ৩৩৫ টাকা। প্রকাশক পার্ল পাবলিকেশন্স। এত জনপ্রিয় বই হলেও বাজারে এর নাম কেউ শোনেনি!

আর মৌসুমি মৌ-এর বইগুলো অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে জাগরণ আসবেই বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, তার এ বইটির প্রকাশক শিশুরাজ্য প্রকাশন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের একুশে বইমেলায় বইটি প্রকাশিত হয়। রকমারি ডটকমে বইটি পাওয়া যাচ্ছে বলা হলেও অনেক চেষ্টা করেও সেখানে মৌ-এর কোনো বই পাওয়া যায়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028030872344971