বন্যার ধাক্কায় শিক্ষা-পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বন্যার বড় ধাক্কা লেগেছে পাবলিক পরীক্ষাসহ গোটা শিক্ষায়। ইতিমধ্যে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আর এসএসসি পেছানোর কারণে পেছাতে হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ঘোষণা করা যাচ্ছে না নতুন সময়সূচি। স্থগিত করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান বি.এড পরীক্ষাও।

এছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আরো বন্ধের নিদের্শ দেয়া হয়েছে।  ফলে শুধু পাবলিক পরীক্ষাই নয় পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। আগামী ৬ জুলাই এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর ১৩ থেকে ১৯ জুলাই ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। যা ইতিমধ্যে স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ছিল আগামী ২২ আগস্ট। কিন্তু এসএসসির পর এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে দুই মাসের প্রয়োজন হয়। তাই পেছানো হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও।

মাধ্যমিক (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যে জেলা ট্রেজারিতে পরীক্ষার খাতা ও প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কিছু জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় খাতা ও প্রশ্নপত্র নিরাপদে রাখতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। যা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

 
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের নতুন সময়সূচি ঘোষণা করা সম্ভব নয়। হয়তো আমাদের এ সপ্তাহটা পর্যবেক্ষণ করা লাগতে পারে। তবে পরীক্ষা শুরুর অন্তত এক সপ্তাহ আগে আমরা সূচি ঘোষণা করব।’ 

গত কয়েকদিন ধরে দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে এর সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে প্রাথমিক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার স্কুল বন্ধের তথ্য এসেছে। বাস্তবে তা ৪ হাজারের কাছাকাছি হতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকায় বন্ধ হওয়ার স্কুল ও কলেজের সংখ্যা এক হাজারের মতো হতে পারে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার আলিয়া মাদ্রাসাও বন্ধ রয়েছে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার খবর পাওয়া গেছে। শিক্ষকরা বলছেন, সিলেট বিভাগে ৯ হাজার ২৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ হাজার ৮৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৯২টি কলেজ ও ৩৯৯টি মাদ্রাসা রয়েছে। এই বিভাগে যেহেতু ৯০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিতÑ ফলে বন্যায় বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়বে। আর নেত্রকোনা জেলায়ই সব ধরনের প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ৭০০ স্কুল-কলেজ বন্ধের খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বন্যাকবলিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে আছে। বাস্তবতার নিরিখে এসব জলমগ্ন বিদ্যালয়ে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব বিদ্যালয়ে শ্রেণি পাঠদান স্থগিত থাকবে।

এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সিলেট অঞ্চল। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই অঞ্চল থেকে ৯৩০টি স্কুলের ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল রাত পর্যন্ত সিলেট শিক্ষা বোর্ড কার্যালয় চত্বর থেকেও পানি পুরোপুরিভাবে নামেনি। অনেক স্কুলে পানি উঠেছে। আর মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রমা বিজয় সরকার বলেন, ‘চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। ওইসব এলাকার শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগের ঘরেই পানি উঠেছে। তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত। এ অবস্থায় তারা পরীক্ষার চিন্তা করতে পারছে না।’ 

রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামসহ বেশ কিছু এলাকায় পানি উঠেছে। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ বছর এই বোর্ডের অধীনে দুই হাজার ৬৭৫টি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬১ জন শিক্ষার্থীর ২৭৭টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির উন্নয়নের আগে পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই। সবার আগে মানুষের দুর্ভোগ দেখতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতিও বিবেচনায় নিতে হবে। একজন শিক্ষার্থীকে বাইরে রেখেও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।’

করোনার কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু ওমিক্রনের দাপটে ফের গত ২১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব প্রতিষ্ঠান খোলা হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয় ২ মার্চ। এরপর থেকে অনেকটা পুরোদমে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা। কিন্তু বন্যাদুর্গত এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026199817657471