যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনছেন অভিভাবকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের একটি বড় অংশ বাড়িতে বসে শিক্ষা নিচ্ছে, দিনে দিনে তাদের সংখ্যাও বাড়ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আসলে অভিভাবকদের উদ্বেগের জায়গাটি কোথায়?

দেশটির সরকারি স্কুলগুলো সামাজিক ন্যায় বিচারের বিষয়গুলি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পরায় অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনছেন। এসব বেশি ঘটতে দেখা যাচ্ছে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে। যদি সেখানকার নাগরিকদের খুব বেশি সময় নেই সরকারের নীতি নিয়ে মাথা ঘামাবার। তবু সরকার বা রাজনীতির চেয়েও সেখানে যেটি প্রাধান্য পায় তা হল- ধর্ম। টেক্সাসের অনেক বাবা-মা'য়েরাই হতাশ হয়ে যাচ্ছেন এই ভেবে যে, সেখানকার সরকারি স্কুলগুলো ধর্মের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

টেক্সাসের রাজধানী অস্টিনের বাসিন্দা শ্যানন হেলমি বলছেন, "এখানকার সরকারি স্কুল বোর্ডের অধীনে ধর্ম যেন একটা নিষিদ্ধ বিষয় হয়ে গেছে।" মিজ. শ্যানন তার চারটি মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। বাসাতেই তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন রেজাইনা সিলিয়া'র অধীনে, যারা এমন গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করে থাকেন যিনি ক্যাথলিক পাঠ্যক্রম অনুসারে তাদের পড়াবেন।

টেক্সাসের মা-বাবা এবং অনেক শিক্ষকদের আরও অভিযোগ রয়েছে যে, সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু আগ্রাসী উদারপন্থী বিষয়ের সূচনা হচ্ছে।

ফলাফল দাঁড়িয়েছে যে, রাজ্যটির বাসিন্দারা সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে একধরনের বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকছে, অনেকটা খৃষ্টান ধর্মতত্ববিদ বা গ্রিক দার্শনিকদের মতো।

"সেইসব বাবা-মা'য়েরা যারা কিনা ধর্মের বিষয়ে স্পর্শকাতর কিংবা রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব হোম স্কুলিং-এর দিকে ঝুঁকছেন। তারা ভাবছেন যে তাদের ছেলেমেয়েরা ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্কুলগুলিতে।"

বলছিলেন রেজাইনা সিলিয়া-র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কেরি বেকম্যান। তার মতে, "রক্ষণশীল বাবা-মা'য়েরা মনে করছেন যে তাদের মূল্যবোধগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায়।"

রেজাইনা সিলিয়া'র পুরো দেশজুড়েই তাদের ব্যবস্থাপনা চলা স্কুল রয়েছে, যেখানে সপ্তাহে মাত্র দু'দিন শিক্ষার্থীরা যায়। আর বাকি দিনগুলো বাড়িতেই শিক্ষা চলে তাদের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী।

সরকারি স্কুল বোর্ডগুলোর নির্বাচন অনেকটা জাতীয় রাজনৈতিক নির্বাচনেরই বহি:প্রকাশ হয়ে গেছে, এমনটা মত অস্টিনের এক বাসিন্দা জন ডামের। তার তিনটি সন্তান রয়েছে এবং তিনি নিজেও সেখানকার স্কুল থেকেই স্নাতক ডিগ্রী নিয়েছেন। তার মতে শিক্ষার মূল বিষয় থেকে লক্ষ্য সরে গিয়ে সেটি অনেকবেশী রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রচারিত হচ্ছে।

এই মতের বিরুদ্ধে যারা তারা বলছেন যে, রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ীই শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে এবং ধর্মের বিষয়ে এখানে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।

অস্টিনের সরকারি স্কুলে ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, দিনে দিনে সেখানে অবস্থা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ধর্মের নামে কোন শিক্ষা দেয়া দূরহ হয়ে পরছে। তার মতে এমনটা ঘটেছে অন্তত গত ১০ বছর ধরে। বাবা মায়েদের এমন উদ্বেগের ফল দাঁড়িয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে চার্টার স্কুলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সেসব স্কুল সরকারের কাছ থেকে সহায়তা নেয় তবে পরিচালনা করে নিজেদের মতো করে।

২০১৫ সালে এমন স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাড়ায় ২.৮ মিলিয়নে, দেশটির জাতীয় শিক্ষা পরিসংখ্যান জানাচ্ছে এ তথ্য। আর সেই সাথে বাসায় থেকে শিক্ষা গ্রহণকারী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা ২০১২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩% থেকে ৮%। যা কিনা বর্তমানে ৩.৫ মিলিয়ন। রেজাইনা সিলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা মেটাতে এখনো সম্ভব নয়। তারা একই ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা চালাচ্ছে অস্ট্রেলিয়াতে।

তবে আমেরিকার শিশুদের অধিকাংশই স্কুলেই শিক্ষা নিয়ে থাকে, যেসব স্কুলকে পাবলিক স্কুল বলা হয়। মার্কিন জাতীয় পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের শরতে ৫০.৭ মিলিয়ন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে।

ছেলেমেয়েদের বাড়িতে যেভাবে শিক্ষা দেয়া হয়, তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। সমালোচকরা বলছেন যে, এভাবে যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এছাড়া শিশুরা সেখানে বেড়ে উঠছে তাদের সমবয়সীদের ছাড়াই।

উভলিঙ্গ মানুষদের মূল সমাজের অন্তর্ভুক্তির বিষয় পাঠ্যক্রমে থাকার বিষয়টিও অনেক রক্ষণশীলদের অপছন্দনীয়।

এমন বিষয় নিয়ে পড়ানোর বিষয়ে আপত্তি তুলে টেক্সাসে একজন ক্যাথলিক শিক্ষকের সরকারি স্কুল থেকে চাকরি ছেড়ে দেবার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

রক্ষণশীল বাবা-মায়েদের একটি বড় অংশ উভলিঙ্গদের বিষয়ে শিক্ষা ছাড়াও আপত্তি তুলেছেন সরকারি স্কুলের শিক্ষায় সমকামী বিবাহ, লিঙ্গ ভূমিকা বা পরিবারের একাত্মতার বিষয়গুলি থাকা নিয়েও।

শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার, তাই এক্ষেত্রে সবার কথা ভেবে পাঠক্রম তৈরি করা উচিৎ বলে মত দিয়েছেন মিজ বেকম্যান।

 

সৌজন্যে: বিবিসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034410953521729