যে কারণে ডাকসু ও ঢাবি প্রশাসন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত বা গুচ্ছপদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। এই অবস্থানের পেছনে যুক্তি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ ও স্বায়ত্তশাসনের দোহাই দিচ্ছে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার খাতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করছে ডাকসু। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  ৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, অনুষদগুলোর ডিন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা একটি সভা করেন। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেছেন অধিকাংশ শিক্ষক। একই দিন ডাকসুর চতুর্থ কার্যনির্বাহী সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বাইরে রাখার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ভর্তি পরীক্ষা একটি একাডেমিক বিষয়। একাডেমিক যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও ডিনস কমিটির। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে, তার আলোকেই ভর্তি পরীক্ষা হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে জানতে অভিমত চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে উপাচার্য এই প্রতিবেদককে ‘কোনো তথ্য বিকৃতি না করার’ পরামর্শ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অনুষদের ডিন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চায় না। শিক্ষকদের অনেকেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধী। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে সেই স্বায়ত্তশাসন খর্ব হবে। কারণ, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ঘনীভূত করবে।

এদিকে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ভর্তি পরীক্ষার খাতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করছেন। তিনি বলেন, ‘মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দেন। সেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। অনেক সময় দেখা যায়, পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরাও পরীক্ষার্থীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোরতম ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের উদাহরণ আছে। এখন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়, সেখানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তিন থেকে চার লাখের কম হবে না। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ভয়াবহতা ও তার ফলাফল হবে মারাত্মক। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে না। এই দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাপদ্ধতি এক নয়, তাদের আকর্ষণ ও স্বাতন্ত্র্য ভিন্ন। ফলে ভর্তি পরীক্ষার খাতার মূল্যায়নটা এক রকম হবে না। এতে মেধাবীরা বঞ্চনার শিকার হতে পারেন।’

কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ছাড়াই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ইউজিসির কিছুটি সমালোচনাও করলেন ভিপি নুরুল। বললেন, ‘ইউজিসি কোনো রূপরেখা ছাড়াই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ দিয়ে পরিচালিত চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) পৃথক ক্যাটাগরি করে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে পারত।’

ডাকসুর জি এস গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার’ জন্য তাঁরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধী। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাওয়া স্বায়ত্তশাসন খর্ব করবে বলে মনে করেন তিনি।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহ প্রসঙ্গে সোমবার ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিদ্ধান্তহীনতার জন্য গোটা জাতির আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকতে পারে না। কারও ‘ইগো’ যেন অন্যদের প্রভাবিত করতে না পারে, এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি শেষ পর্যন্ত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাবে, নাকি নিজেকে এর আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে, এটি জানা যেতে পারে কাল বুধবার। এদিন শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, অনুষদগুলোর ডিন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।

আরও পড়ুন: 

সমন্বিত নয় নভেম্বরে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা চান উপাচার্যরা

শিক্ষার্থীবান্ধব সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা, তবে...

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবির মিশ্র প্রতিক্রিয়া

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে দুই দিন, আবেদন ১০টিতে

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবি শিক্ষকের যত যুক্তি

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় প্রাপ্তিতে মেধাই ভিত্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: সমন্বিত পরীক্ষার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষক

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আগামী বছর থেকে

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে চার বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শ দিল ইউজিসি

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নতি স্বীকার নয়

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ভোগান্তি কমবে : শিক্ষামন্ত্রী

যে কারণে ডাকসু ও ঢাবি প্রশাসন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চায় না


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033161640167236