শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে

সোলায়মান মোহাম্মদ |

আমার ছেলেটি এবার নার্সারিতে উঠেছে। ছেলের মা প্রায়ই বলে ছেলের খোঁজখবর রাখতে ওর স্কুলে যেতে, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয় না। যা হোক, সময় করে একবার গিয়েছিলাম। সব শিক্ষকের সঙ্গেই কথা হল। ক্লাস টিচারের কাছে জানতে চাইলাম ছেলের পারফরম্যান্সের অবস্থা। শিক্ষক জানালেন, তেমন ভালো না, আবার একেবারে খারাপও না। আমি বললাম, ছেলেকে বেত্রাঘাত করেন অন্যায় করলে? শিক্ষক একটু সংকোচিত হয়ে বললেন, না বেত্রাঘাত ঠিক করি না, তবে মাঝে মাঝে শাসন করি।

শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার সময় আমার ছেলেটি পাশেই ছিল। আমি বললাম, অন্যায় করলে অবশ্যই শাসন করবেন। শাসন না করলে আমার ছেলে মানুষ হবে কীভাবে? এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষক আমার ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করলেন আর বললেন, অবশ্যই শাসন করব, প্রয়োজনে পিটুনিও দেব। ছেলেকে বললাম একটু দূরে যেতে। পরে শিক্ষককে আবার বললাম, দয়া করে চড়-থাপ্পড় দেবেন না। আর হ্যাঁ, শাসন করবেন ঠিক আছে, পাশাপাশি আদরও কিন্তু করতে হবে। যিনি আদর করেন, কেবল তিনিই শাসন করার ক্ষমতা রাখেন।

এবার আসি মূল বিষয়ে। স্কুল-কলেজে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপর থেকে শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা তা বোধহয় আর বলার প্রয়োজন নেই। শুধু দু-একটি উদাহরণ দিই। চলমান এসএসসি পরীক্ষার হলে শিক্ষক নিয়মানুযায়ী গার্ড দিয়েছেন। কাউকে নকল করতে দেননি। এটিই শিক্ষকের অপরাধ! পরীক্ষা শেষে ওই শিক্ষককে কয়েকজন ছাত্র মিলে দৌড়িয়ে মাঠ থেকে শিক্ষক কন্ট্রোল রুমে পাঠিয়ে দেয়। এটি তো আমাদের উপজেলার কথা বললাম। পত্রিকায় এমনও খবর পড়েছি যে, পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে এক ছাত্র শিক্ষককে ছুরিকাঘাত করেছে একই কারণে, অর্থাৎ নকল করতে না দেয়ায়। পরীক্ষার কথা শুধু বলছি কেন, শ্রেণীকক্ষেও একই অবস্থা, কোনো শিক্ষার্থীকে ধমক পর্যন্ত দেয়া যায় না এখন।

স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের প্রহারের বিষয়টি উঠিয়ে দেয়া হলেও শাসনের রেওয়াজটি বোধহয় থাকা উচিত। ইসলামেও রয়েছে সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শাসন করতে হবে। একজন শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের সামান্য শাসনটুকুও করতে না পারেন, তাহলে কীভাবে আমাদের সন্তানরা মানুষ হবে? শুধু আদর-ভালোবাসা দিয়ে এখনকার ছেলেমেয়েদের মানুষ করা সম্ভব নয়। আমার সন্তানকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষককে যদি প্রয়োজনে শাসন করতে হয়, তাহলে তা করাটাই শ্রেয় বলে মনে করি। তবে সেটি যেন অতিরিক্ত মাত্রায় না হয়। অধিক ভয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা ও মানবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষকদের। আমাদের সন্তানরা মানুষের মতো মানুষ হোক, এটিই আমাদের প্রধান এবং একমাত্র প্রত্যাশা।

সোলায়মান মোহাম্মদ : সংবাদকর্মী, গাজীপুর

 

সৌজন্যে: যুগান্তর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026609897613525