হাজী নাছির কলেজে দায়সারাভাবে শোক দিবস পালন, ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অত্যন্ত দায়সারাভাবে জাতীয় শোক পালন করায় সাতক্ষীরার কলারোয়ার হাজী নাছির উদ্দীন কলেজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন অভিভাবক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে মাত্র ৫/৬ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অথচ কলেজটিতে শত শত শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজের নিকটতম প্রতিবেশী আওয়ামী ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদেরও কর্মসূচিতে থাকতে বলেননি কলেজ অধ্যক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।

কলেজের রিজার্ভ ফান্ডে থাকা লাখ লাখ টাকা তুলে কথিত মেরামতের নামে খরচ করে ফেলেছেন জালসনদধারী শিক্ষকরা। কলেজটিতে জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া ও সরকারের নির্দেশে এমপিও স্থগিত থাকা শিক্ষকদের শিগগিরই অবরোধ করবেন স্থানীয় ও অভিভাবকরা। 

জানা যায়, শিক্ষকদের জাল সনদ, কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ধরা পড়ার পর এমপিও স্থগিত হয়ে যায়। আর সেই স্থগিত এমপিও ফিরে পেতে দালালদের মাধ্যমে তদবিরসহ নানা ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত জাল সনদধারী শিক্ষকরা। কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে শাস্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানা যায়। কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিলেন। এসব কারণে, কলেজটির পড়াশোনা লাটে উঠেছে। 

যশোর শিক্ষা বোর্ড ও কলেজসূত্রে জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে বাণিজ্য শাখায় মাত্র ১১ জন ভর্তি হয়েছে। অথচ আসন সংখ্যা ১৫০। বিজ্ঞানে ৩৪ জন ভর্তি হয়েছে। মানবিকে ১৪৪ ও বিএম শাখায় ১৬৫ জন। বিএম শাখায় উপস্থিতিতে শতকরা ৪০ নম্বর আর তাই সারাদেশেই বিএম শাখায় ভর্তি বেশি। তবুও ২৫০ আসনের বিপরীতে ভর্তি ১৬৫ জন। অথচ চার বছর আগে এই কলেজে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ছিল।

সামনে অনার্সে ভর্তির মৌসুম হলেও অধ্যক্ষসহ অধিকাংশ শিক্ষকদের দেখা যায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ঘুর ঘুর করতে। জালসনদধারী এসব শিক্ষকদের সাথে দেখা যায় পাশের উপজেলা মনিরামপুরের কয়েকজন দালালকে।  

অভিভাবকরা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত হয় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে। জাল সনদ ও কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতাবিহীন সাধারণ ও কারিগরি শাখায় মোট ১৪ জন শিক্ষকদের এমপিও স্থগিত হয় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে।

এলাকাবাসীর মতে, বাল্যবিবাহপ্রবণ ও শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া কলোরোয়ার ছলিমপুর এলাকার হাজার কোটিপতি ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী এনাম হক তাঁর বাবার নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্যরা নিজেদের কোনো আত্মীয়-স্বজনকে এই কলেজে শিক্ষকতা বা অন্য কোনো পদে চাকরি দেননি। এনাম হক অস্ট্রেলিয়ান সিআইপি। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় অভিযুক্ত শিক্ষকরা ভুয়া ও জাল সনদ দেখিয়ে চাকরি লাভ ও এমপিওভু্ক্ত হন। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তার তদন্তেও ধরা পড়েছে কলেজের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দায়সারাভাবে শোক দিবস পালনের দায়ে শাস্তি চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়  ও অধিদপ্তর এবং জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুদকের বরখাস্ত ও জেলে থাকা উপপরিচালকের মাধ্যমে দুদক থেকে নিজেদের পক্ষে কাগজ বের করা জালসনদধারী কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নতুন করে দুদকে অভিযোগ জমা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 

অভিভাবকদের ক্ষোভের কথা জানতে পেয়ে কয়েকজন চতুর শিক্ষক কয়েকটি ছবি ফেসবুকে দিয়েছেন বলে শুনেছি। 

এদিকে জালসনদধারী ও এমপিও স্থগিতথাকা কয়েকজন শিক্ষক মানবিক কারণে এমপিও ছাড়ের আবেদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওই আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অগ্রায়ান করা হয়েছে। নতুন করে তদন্ত করছে শিক্ষা অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তা। 

দৈনিক শিক্ষার এক প্রশ্নের জবাবে একজন তদন্ত কর্মকর্তা গত সপ্তাহে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করার কাজ চলছে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে যত তদন্ত হয়েছে তার সব প্রতিবেদনই আমাদের হাতে রয়েছে। প্রচলিত বিধানের বাইরে গিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার সুয়োগ নেই।’ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026299953460693