হৃদয় মণ্ডল প্রকৃতই শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গুটিকয়েক শিক্ষাব্রতী ইংরেজ দ্বারা ভারতীয় ইয়ংদের মধ্যে জ্ঞান-জিজ্ঞাসা তথা শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যের একাগ্রতা সৃষ্টি ছিল সনাতন জীবনের মৃত্যুবাণ। বিশেষ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাই লিখতে পেরেছিলেন, ‘বঙ্গদেশের সনাতন পবিত্র প্রথার মধ্যে নাই’ বলার অধিকার। এ কারণে তিনি ধর্মীয় পরিচয়ে নিজেকে ‘ব্রাহ্ম’ বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। মঙ্গলবার  (১৯ এপ্রিল) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়,  ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসনের অবশেষ টিকিয়ে রাখা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দোষে ১৯৬১ সালে তাকে বেআইনি করা হয়েছিল। তার জন্মশতবার্ষিকী পালনে সরকারিভাবে বাধার সৃষ্টি হয়েছিল। তখন পূর্ব পাকিস্তানের ‘ইয়ং’রা এর বিরোধিতা করে। ইয়ংদের বিরোধিতার পেছনে বয়স্ক অভিভাবকরা নেপথ্যে দাঁড়িয়ে যে সাহস জুগিয়েছিলেন, তা কেউ বলি না। অ্যাংরি ইয়ংদের মধ্যে (পরবর্তীতে) ড. সন্জিদার নাম বলি। তার বাবা ড. কাজী মোতাহার হোসেনের নেপথ্যের অবদান ভুলেও তাই উচ্চারিত হয় না। গোটা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬১ সালে দিনাজপুর শহরের লালবাগ মহল্লার সেরেস্তাদার মাঠের বিস্তৃত ফাঁকা জায়গায় তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উৎসব পালিত হয়েছিল। দিনাজপুরের তদানীন্তন প্রবীণ সমাজসেবী আলহাজ মোহাম্মদ হেমায়েত আলী এর উদ্যোক্তা ছিলেন। ঢাকার দৈনিক সংবাদ তিন দিনই এর প্রতিবেদন ঢাউস আকারে প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠায় ছাপিয়েছিল। ড. মোতাহার হোসেন ও আলহাজ হেমায়েত আলীরা তাদের নাম-ডাকের জন্য এমন নীরব ভূমিকা নেননি তখন। তাদের চেতনায় বরাবর ছিল অসাম্প্রদায়িক শিক্ষার স্বপ্ন। যা এসেছিল ব্রিটিশশাসিত ভারতে গুটিকয়েক শিক্ষাব্রতী ইংরেজ দ্বারা বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ তৈরি হওয়ার কারণে। আমরা একদা বাঙালিরা এভারেস্ট শৃঙ্গের উচ্চতা (২৯ হাজার ১৪১ ফুট) পর্যন্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে ঠিক করেছিলাম। এ কৃতিত্বের দাবিদার না হয়ে রাধানাথ সিকদার নিজের নাম প্রচারে নীরব থেকে, স্যার জর্জ এভারেস্টের নামকরণে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে অভিহিত করেন। বিজ্ঞানের উদার শিক্ষার জয়গান এখানে প্রতিধ্বনিত হয়।

সে বিজ্ঞান শিক্ষায় উচ্চ চারিত্র্য গুণসম্পন্ন ও সদ্য কারামুক্ত বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডল যে প্রকৃতই বিজ্ঞান শিক্ষক, দৈনিক সংবাদে (১২ এপ্রিল, ২০২২) প্রকাশিত, ‘আমি ক্লাস নিতে চাই’ শীর্ষক সাংবাদিক সাক্ষাৎকার পড়ে সবার তাই মনে হবে। তিনি ওই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ওরা তো শিশু।… যা করেছে ওরা হয়তো না জেনেই করেছে। খোদার কাছে প্রার্থনা করি, ওরা সুন্দর ও স্বভাবিক মানুষ হোক।’ তিনি এও বলেছেন, ‘আমাকে সবাই যেন আপন করে নেয়, আমিও যাতে সবাইকে আপন করে নিতে পারি, কোনো কলহ যাতে না থাকে।’ ওই সাক্ষাৎকারের এ ভাষা মনে করিয়ে দেয়, ইংরেজের উদার শিক্ষা বিজ্ঞান ও ধর্মে ফাটল সৃষ্টি করে না। বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনেও আছে প্রণোদনামূলক সেই চেতনা। আমরা তা ভুলি কী করে? জয় বাংলা।

মুহম্মদ জুলফিকার আলী : লেখক ও অবসরপ্রাপ্ত বিসিএস (প্রশাসন) সদস্য।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027670860290527