দাখিল পরীক্ষায় খারাপ ফল করায় ৫০৮ মাদ্রাসাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর । আগামী এক মাসের মধ্যে এসব মাদ্রাসাকে এ নোটিশের জবাব দিতে হবে। ব্যর্থতায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা বন্ধ করা হবে। এ ছাড়া মাদ্রাসার এমপিও, পাঠদানের অনুমতি এবং স্বীকৃতি বাতিল করারও চিন্তা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষ্যে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। আমরা জানতে চাই, তারা কেন শিক্ষার্থী পাস করাতে পারেনি বা তারা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না কেন? সন্তোষজনক জবাব না পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদ্রাসা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানত চার ধরনের মাদ্রাসাকে এই শোকজ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, যেসব প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের দাখিল পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস করাতে পারেনি। যেসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯ জন। যেসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩০ জন, কিন্তু তারপরও তাদের ৪-৫ জন করে ফেল করেছে। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এই চার ক্যাটাগরিতে মোট ৫০৮টি প্রতিষ্ঠান আছে।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের দাখিল পরীক্ষায় সারা দেশে ৩৪টি মাদ্রাসা একজন শিক্ষার্থীও পাস করাতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানকে এক বছরের সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া দাখিল পরীক্ষায়ও যদি এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী পাস করাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সব শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতনভাতা বন্ধ করে দেবে সরকার।
এ ছাড়া অন্য তিন ক্যাটাগরির মাদ্রাসাকে জেলাওয়ারী তালিকা করে কারণ দার্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। এর মধ্যে কুষ্টিয়া জেলায় আছে ৫টি, লালমনিরহাটে ৩টি, মাদারীপুরে ২টি, লক্ষ্মীপুরে ৪টি, নরসিংদীতে ২টি, নোয়াখালীতে ও নারায়ণগঞ্জে একটি করে, নীলফামারীতে ৫টি, পিরোজপুরে ৪টি এবং সাতক্ষীরায় ৭টি মাদ্রাসা আছে। এভাবে প্রতি জেলায় খারাপ ফল করানো মাদ্রাসা কমবেশি আছে। চিঠি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দৌলতপুর উপজেলার রবিউল আউয়াল দাখিল মাদ্রাসা থেকে মাত্র ৫ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। কিন্তু পাস করেছে ২ জন। একই জেলার নওদা খারারা নেছারিয়া দারুসসুন্নাত দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৪ জন অংশ নেয়। ২ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। লালমনিরহাটের বদশাহ দারুচ্চুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩ জন অংশগ্রহণ করে ১ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। রাতিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, ফলাফল বিপর্যয় ও কম শিক্ষার্থী পাস করায় এবং ভর্তি হওয়া কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সরকার মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় স্কেলে ২০১৫ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাযোগ্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পরও দাখিল পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ও কম শিক্ষার্থী ভর্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জানা গেছে, নোটিশপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলোর কাছে শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, ২০১৬ সালের দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী কম কেন? বিগত তিন বছরের দাখিল পরীক্ষার ফলাফল, মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা, প্রতিবছর শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য সরকারি আর্থিক অনুদান/ সরকারি বেতন-ভাতাদি বাবদ খরচ কত- এসব তথ্যও জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এতে মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা নোটিশে উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্টদের আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক বলেন, যে প্রতিষ্ঠানে ৯ জনের কম শিক্ষার্থী তারা একজন পাস করাতে পারবে না, সেটা কেমন কথা। আবার কোনো মাদ্রাসায় ৩০ জনের কম ছাত্রছাত্রী কিন্তু ৫-৬ জন করে ফেল করেছে কীভাবে? এসব ঘটনায় কারণ দার্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
দেশে বর্তমানে দাখিল পর্যায়ের মাদ্রাসা আছে প্রায় ৮ হাজার। এর অধিকাংশই এমপিওভুক্ত। একটি দাখিল মাদ্রাসায় ১৭ জন জনবল থাকে।