৬ হাসপাতালের কেউ ভর্তি নিল না, চিকিৎসা ছাড়াই মরতে হল মুক্তিযোদ্ধাকে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল মো. আলমাছ উদ্দিনের। আগেও একবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসকদের কাছে ছবি পাঠানোর পর তাঁরা জানিয়েছিলেন লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে আবারও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বাবা আলমাছ উদ্দিনকে নিয়ে সন্তানেরা পাঁচটি হাসপাতালে ঘুরেছেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের চিকিৎসা ছাড়াই আজ রোববার সকালে মারা যান তিনি। আজ প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক সংবাদে  এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, আলমাছ উদ্দিনের মেয়ের সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় কথা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ওই নারী বলেন, ‘শনিবার সকাল ৮টায় বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় আমাদের বাসাবোর বাসা থেকে। অনেকগুলো হাসপাতাল ঘুরে রাত ১২টার দিকে অনেক দেনদরবারের পর একটি হাসপাতাল নিল। কিন্তু বাবাকে বাঁচানো গেল না। আমার বাবা একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা গেল। কী যে কষ্ট!’

মুক্তিযোদ্ধা মো. আলমাছ উদ্দিন | ছবি : সংগৃহীত

মেয়ে জানালেন, বাবা আলমাছ উদ্দিনের পেটের পুরোনো রোগ। শুক্রবার ভীষণ ডায়রিয়া, সঙ্গে জ্বর। কিছুক্ষণ পর কথা জড়িয়ে যেতে থাকে তাঁর। তখনই পরিবারের লোকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। এমনিতে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন তিনি। জ্বর-ডায়রিয়া শুনে তাঁরা নিতে চাননি। পরদিন শাহবাগের একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে বুকের এক্স-রে করে নিউমোনিয়া মতো মনে হচ্ছিল। করোনা ভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে দেখে তাঁরা রাখেননি। সেখান থেকে তাঁরা ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেন। তাঁদের আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে। রোগী ভর্তি করা যাবে এই আশ্বাস পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় আলমাছ উদ্দিনকে। কর্তৃপক্ষ রাখতে রাজি হলেও, চিকিৎসকেরা আসেননি।  

ওই হাসপাতাল থেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। ভর্তি নেয় তারা। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে পাঠানোর সময় চিকিৎসকদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য না পেলে রোগী রাখবেন না বলে জানান। তাঁরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যান। পৌঁছানোর আগে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যার পর আলমাছ উদ্দিনের অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায় কুয়েত মৈত্রীর গেটে। তাঁরা লক্ষণ দেখে বলেন, রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। সেখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা থাকলে বিপদ।

এভাবে ছয় হাসপাতালে গিয়েও বাবাকে ভর্তি করাতে পারেননি সন্তানেরা।

এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যখন এভাবে ছুটছেন আলমাছ উদ্দিন, তখন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসেন। আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে বলেন, ‘বাবা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এই পরিচয় দিয়ে কখনও কোনো সুবিধা নেয়া পছন্দ করতেন না। আমরাও তাই কোনো হাসপাতালে গিয়ে এই পরিচয় দিইনি।’ মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড আছে। মুক্তিযোদ্ধারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। হাসপাতালের সিটিস্ক্যান, এমআরআই মেশিন নষ্ট। পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই।

আলমাছ উদ্দিনের মেয়ে বলেন, বাবাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল শুধু। বাকি পরীক্ষার পর চিকিৎসা শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। সেই সুযোগ আর হয়নি। সকাল সোয়া ৭টায় মারা যান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল হাসান বলেন, হাসপাতালে গিয়ে রোগীরা যে চিকিৎসা পাচ্ছেন না, এই খবর তাঁরা পাচ্ছেন। কীভাবে রোগীদের কষ্ট কমানো যায়, ভাবছেন তাঁরা। আগামী বুধবার সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন। সেখান থেকে হয়তো একটা উপায় বেরিয়ে আসবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025589466094971