এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির কী দরকার

অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান |

সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কমিটি ছাড়া পরিচালিত হতে পারলে বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের টাকার পরিচলিত হতে কেনো কমিটির প্রয়োজন আছে কী। বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আর্থিক বিষয়গুলো তদারকি করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারেন। ফায়দা লোটার জন্য এসে শিক্ষকদের সঙ্গে ঝগড়া ফ্যাসাদ বাধানোর লোকের প্রয়োজনীয়তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই।’ 

কবি নজরুল সরকারি কলেজ, খুলনা বিএল কলেজসহ সারা দেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে চলছে, সে একই নিয়মে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চলতে পারে।

কারণ, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে। যদিও কমিটি প্রথার শুরুই হয়েছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় জমি, শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সব নিশ্চিত করা। দানশীলরাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বানাতেন আর তারাই পরিচালনা করতেন। কিন্তু আয় ছাড়াও গত প্রায় দুই দশক ধরে এক শ্রেণির আমলা ও রাজনীতিকের প্রভাব নিশ্চিন্তকরণের ক্ষেত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই কমিটিকে। কমিটির সভাপতির হাতে শিক্ষকরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব ছিলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর এসব নেতাও লাপাত্তা হয়ে যান। ফলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ছাড়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

 আমরা জানি, এক সময় বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষকরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতন পেতেন না। পরবর্তী সময়ে এমপিও প্রথা চালুর মাধ্যমে কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা পাওয়া শুরু করেন। একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টিউশন ফিসহ অন্যান্যখাতের আয় দিয়েও তাদের বেতন-ভাতা নেয়া অব্যাহত থাকে। তবে, সব প্রতিষ্ঠানের আয় সমান নয়।

প্রতিষ্ঠানের আয় কোষাগারে জমা দেয়ার শর্তে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাস থেকে সরকার কোষাগার থেকে মূল বেতন স্কেলের শতভাগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরিচালনা কমিটি ও কতিপয় মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমিতির কতিপয় শিক্ষক নেতার বিরোধিতায় প্রতিষ্ঠানের আয় কোষাগারে জমা বিধান বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। পরে ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার শতভাগ বেতন-ভাতা কোষাগার থেকে দেয়া শুরু করে। তবে, বেসরকারি রেজিস্ট্রার্ড ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এই ঘোষণা ও বেতন-ভাতা সুবিধার আওতায় আসেনি। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকার এক ঘোষণায় সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করে। 

শুধু বেতন-ভাতাই নয়, মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের খরচই বহন করে সরকার। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ সব আসবাবপত্র, শিক্ষা উপকরণ, নতুন ভবন তৈরি, ভবন সংস্কার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের খরচ সবই বহন করে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বড় অংশটিই ব্যয় হয় এসব খাতে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অযাচিত খবরদারির দায়িত্ব পরিচালনা কমিটির। সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠানের সবকিছু চললেও সরকারের হাতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ নেই। শিক্ষকরা বলছেন, যখন সরকার পুরো বেতন-ভাতা দিতো না তখন শিক্ষকদের বেতনের টাকা সংগ্রহ করে দেবার জন্য কমিটির দরকার ছিলো। চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনে দিতে হতো। তবে এখন আর এর দরকার কী?

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের কমিটির কোনো প্রয়োজন নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সক্ষমতা আছে। ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তাই সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। 

লেখক : অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, সভাপতি, অধ্যক্ষ পরিষদ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041718482971191