এমপিওভুক্তিতে ঘুষ নেয়ায় দোষ দেখেন না শিক্ষা কর্মকর্তা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি |

বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসায় কর্মচারী নিয়োগ ও এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইল অনলাইনে অগ্রায়ণের জন্য ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিওর ফাইল অগ্রায়ণ করতে তিনি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। আর এনটিআরসিএর সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন অগ্রায়ণে নেন ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা। তবে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে এমপিওভুক্তির জন্য নেয়া টাকাকে ঘুষ হিসেবে দেখতে নারাজ অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা। টাকা নেয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছেন, ‘এতে দোষের কিছু দেখি না!’  

জানা গেছে, গত ৫ মে আক্কেলপুরের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন শফিকুল ইসলাম। তার নিয়োগের পর উপজেলায় ৮-১০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয়েছে। এসব নিয়োগে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়া ওই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ও এনটিআরসিএ শিক্ষকদের এমপিওর ফাইল অগ্রায়ণ করতে জনপ্রতি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন তিনি। এই টাকা কেউ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে, কেউ প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে ওই কর্মকর্তাকে দিয়েছেন। তিনি এমপিও ফাইল অগ্রায়ণে নেয়া ঘুষের টাকার রসিদ দেয়ার কথাও বলেছেন। তবে তিনি কাউকে এ টাকার রসিদ দেননি।

আর কে এম দাখিল মাদরাসার সুপার গোলাম আযম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে মারুফ হোসেন নামে একজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এ নিয়োগে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। এতে তিনি খুশি হননি। আরো টাকা দাবি করেছেন। এই টাকা বৈধতা রয়েছে দাবি করে তিনি আমাকে এ টাকার রসিদ দিতে চেয়েছেন। তবে রসিদ দেননি। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রার্থীর অনলাইনে এমপিও আবেদন ফাইল পাঠানোর জন্য ফোনে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন।

সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, সম্প্রতি আমাদের বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী দিয়েছি। তবে কতো টাকা সম্মানী দিয়েছেন তা জানাতে চাননি এ প্রতিষ্ঠান প্রধান।

ঘুষ নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুল-মাদরাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও অনলাইনে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাতে টাকা নেয়ার কথা অকপটে স্বীকারও করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। আর ওই টাকা থেকেই আমাকে টাকা দেয়া হয়। তাছাড়া ফাইল অনলাইনে পাঠাতে পরিশ্রম করতে হয়। এতে যা টাকা নেয়া হয় এগুলো ঘুষ না, সম্মানী বা পারিশ্রমিক বলতে পারেন। তিনি বলেন, এটা দোষের কিছু দেখি না! 

সম্মানীর টাকা কোথায় থেকে দেয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য যে টাকা ছাড়া কোনো নিয়োগই হয় না। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেন। সেখান থেকে তারা খরচ করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডোনেশন দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে রাখতে হয়। ব্যাংক হিসেব থেকে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তুলে খরচ করতে হয়। কিন্তু ডোনেশনের টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসেবে জমা হয় না।

ঘুষ নেয়া এ শিক্ষা কর্মকর্তা আরো বলেন, দেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনজন কর্মচারী নিয়োগ হবে। কয়েক দিন আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসে আমাকে বললেন, আমরা আপনাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে দশ হাজার টাকা দেবো। আমি বললাম আমাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেবেন কোনো সম্মানী দিতে হবে না। পরে বিদ্যালয় পরিচালনার কমিটির একজন সদস্য এসে বললেন স্যার নিয়োগে ৪২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তাহলে বোঝেন। 

তিনি আরো দাবি করেন, আমি নিয়োগের সম্মানী টাকার রসিদ দেয়ার কথা নয়, মাস্টার রোলে স্বাক্ষর দেয়ার কথা বলেছি। এটা আমার প্রাপ্য। সরকার থেকে আমাকে এ ব্যাপারে টিএডিএ দেয়া হয় না। আমি সম্মানীর টাকা আমার আয়কর রির্টানে দেখাবো।
 
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শিশির কুমার উপাধ্যায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068159103393555