নওগাঁর সাপাহারের তিলনী সরনী দাখিল মাদরাসা এমপিওভুক্তির পর প্রকৃত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে ওই পদগুলোতে অন্য ৩ জনকে এমপিওভুক্ত করিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতবছর মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। কিন্তু এমপিওভুক্তির পর আগের তিনজন শিক্ষককে বাদ দিয়ে অন্যদের ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. ফিরোজ হোসেন।
এ ঘটনায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ জেলা প্রশাসক বরাবর সুপার ও এমপিওপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই মাদরাসায় মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ আগস্ট সহকারী মৌলভী পদে নিয়োগ পেয়ে যোগদান করেন। ওই বছরের ৯ আগস্ট যোগদান করেন মোহাম্মদ মতিউর রহমান। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে মো. রফিকুল ইসলাম নিয়োগ পেয়ে ১৪ মার্চ যোগদান করেন। তারা এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করছেন। বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন বিবৃতি ফরমে এখনো তাদের নাম আছে। তবে, বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যে গত ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সুপার কোন শিক্ষক ও কর্মচারীর তথ্য এন্ট্রি করেননি। এরপর তিনি গত ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তথ্য ব্যানবেইসে আপলোড করেন। সেখানেও শিক্ষক হিসেবে তাদের নাম আছে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে সাপাহার উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাদের শিক্ষক হিসেবে ভোটের দায়িত্ব পালনের জন্য মাদরাসার অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের নামও পাঠন। সে মোতাবেক তারা পুলিং অফিসার হিসেবে ভোট গ্রহণ করেন। কিন্তু পরে সুপার তাদের নাম বাদ দিয়ে গোপনে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন কমিটির ও নির্বাচন কমিটির সিল স্বাক্ষর জাল করে ওই পদগুলোতে অন্যদেরকে শিক্ষক দেখিয়ে তাদের নামে বিল বেতন চালু করেছেন এবং ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ব্যানবেইসের তথ্য নতুন করে আপডেট করেন।
অভিযোগকারী শিক্ষক মোহাম্মদ মতিউর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়োগ পাই এবং ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আমি ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ছিলাম। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর জাল করে আমার পদে জাহাঙ্গীর আলমকে শিক্ষক দেখিয়ে তার নামে এমপিও করিয়ে দেন এবং ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ব্যানবেইসে তার তথ্য আপলোড করেন।
অভিযোগকারী অপর শিক্ষক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসায় সহকারী মৌলভী পদে নিয়োগ নিয়োগ পাই। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের মাদরাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর জাল করে আমার পদে মোজাম্মেল হককে শিক্ষক দেখিয়ে তার নামে এমপিও করে দেন।
অভিযোগকারী অপর শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ১২ মার্চ সমাজ বিজ্ঞান সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়োগ পাই। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর জাল করে মোসা. তাসলিমা খাতুনকে সমাজ বিজ্ঞান পদে শিক্ষক দেখিয়ে তার নামে এমপিও করে দেন।
জানতে চাইলে বর্তমানে সহকারী মৌলভী পদে এমপিওভুক্ত মোজাম্মেল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার নিয়োগ ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে হয়েছে। আমি তখন থেকেই কর্মরত আছি। ব্যানবেইস বা অন্যান্য জায়গায় দেয়া তথ্যে আপনার নাম নেই কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সুপার সাহেবকে বলেন তিনিই বলবেন।
জানতে চাইলে সহকারী মৌলভী পদে এমপিওভুক্ত জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসাবে আমার এমপিও এসেছে। আর কিছু জানার থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে জানুন।
মন্তব্য জানতে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে বর্তমানে এমপিওভুক্ত তাসলিমা খাতুনের মুঠোফোনে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে তিলনী সরনী দাখিল মাদরাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. ফিরোজ কবির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মাদরাসার সভাপতি মো. নাঈম হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি বর্তমানে ওই মাদরাসার সভাপতি। আগে তাদের কার কিভাবে নিয়োগ হয়েছে তা আমি জানি না। তবে তাদের কাগজপত্র যা আমাকে সুপার সাহেব দিয়েছেন তাতে আমি স্বাক্ষর করেছি। এ ব্যাপারে আমাকে আগে কেউ কিছু বলেননি।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মাওলা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।