চা-বাগানের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চা-বাগানের কথা শুনলেই সবার চোখের সামনে উঁচু-নিচু সবুজে সারিবদ্ধ ঘন চা-গাছের নয়নাভিরাম স্বর্গীয় দৃশ্যপট ভেসে ওঠে। কিন্তু দুটি পাতা একটি কুঁড়ির এই চা-বাগানগুলোতে যাঁদের জীবনগাথা সেই চা শ্রমিক এবং তাঁদের জীবনধারার নিদারুণ কষ্টের নীরব আর্তনাদ কেউ দেখার চেষ্টা করে না। শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায়

উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বসবাস শুরু করলেও চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের পর। বর্তমানে চা-শিল্পে শ্রমিকের সংখ্যা আনুমানিক ছয় লাখ ৩০ হাজার, আর মোট জনসংখ্যা ১০ লাখের বেশি।

শ্রমিকদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে চা জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

চা-বাগানগুলোতে বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি। ফলে চা-বাগানের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা এসব এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে শুরু হয়। এ ছাড়া প্রতিটি চা-বাগানেই বাগান কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি সহযোগিতায় মোট ১১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে চা-বাগানের শিশুরা যুগোপযোগী প্রাথমিক শিক্ষায় আসেনি। এই বিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগই এখনো জাতীয়করণ হয়নি। ফলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসংক্রান্ত টানাপড়েন থাকছেই।

পড়াশোনা শুরুর পর চা-বাগানের শিক্ষার্থীরা আটকে যায় ভাষাগত কারণে। চা-বাগানের শিশুরা নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা পরিবারে শেখে এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরোলেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রধানত দারিদ্র্যের কারণে বেশির ভাগ ছেলে-মেয়েকেই জীবনসংগ্রামে জড়িয়ে পড়তে হয়ে। এ লড়াই বেঁচে থাকার। যেসব শিক্ষার্থী দারিদ্র্যের সঙ্গে পেরে উঠতে পারে তারা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজেও পড়ছে। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিকে ভালো ফল না থাকায় অনেকেই ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে না। এমনিভাবে উচ্চ মাধ্যমিকেও ভালো ফল না থাকায় সরকারি কলেজেও সুযোগ পায় না। ফলে যারা নিজস্ব আগ্রহে পড়তে চায় তারা ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হয়।

দারিদ্র্যসীমার নিচে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। দুবেলা খাবার জোগাড় করার জন্য রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে রুগ্ণ শরীর নিয়ে চা-বাগানে কাজ করতে হয় তাঁদের। থাকা-খাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করতে পারে না ৫০ শতাংশ চা শ্রমিকের সন্তান, সেখানে উচ্চশিক্ষা শুধুই বিলাসিতা বললেই চলে। দেশের ১৬৩টি চা-বাগানে প্রায় ১০ লাখ চা শ্রমিকের মধ্যে শিক্ষার হার খুবই সামান্য। এর পরও চা শ্রমিকদের সন্তানদের মধ্যে অদম্য কিছু শিক্ষার্থীর দেখা মেলে মাঝেমধ্যে। যাঁরা ১০ লাখ চা শ্রমিকের সন্তানদের স্বপ্ন দেখান, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামের কথা জানান এবং লড়াইয়ের বীজ বুনে দেন।

কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক উচ্চশিক্ষায় ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। কারণ কলেজ পেরিয়ে অনেককেই সংসারের হাল ধরতে হয়। ফলে আর পড়াশোনা হয় না। যারা অবশিষ্ট থাকে তারা সরকারি কলেজগুলোতে পড়ে। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সুবিধা না পাওয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল না করা, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে প্রস্তুতি নিতে না পারা এই শিক্ষার্থীরা নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে তবু থেমে থাকে না।

তুখোড় মেধা ও প্রবল আত্মবিশ্বাসের বলে এখন পর্যন্ত চা-বাগানের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যালে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছেন। যথাযথ যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে চা-বাগানের শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে থাকবে না।  

চা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন ভূমির অধিকার থেকে। চা শ্রমিকরা চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত একচালা আধা কাঁচা ঘরে থাকেন। বসবাস অযোগ্য এসব ঘরে গবাদি পশুসহ রান্নার কাজও চালিয়ে নিতে হয়। প্রতিকূল আবহাওয়ায় অবস্থা আরো খারাপ হয়। তবে বাগান কর্তৃপক্ষ বছরে একবার মেরামত সহায়তা দিলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। আর পয়োনিষ্কাশন এবং স্যানিটেশন পরিস্থিতি আরো খারাপ। দেশে ১৬৬টি চা-বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২টি, সিলেটে ১৯টি, হবিগঞ্জে ২৩টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি, চট্টগ্রামে ২২টি, রাঙামাটিতে একটি, পঞ্চগড়ে সাতটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি চা-বাগান। বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন চা-বাগান হলেও এসব চা-বাগানের ভূমির মালিক রাষ্ট্র। উৎপাদন আর ব্যবস্থাপনার দিক বিবেচনা করে এসব চা-বাগান বিভিন্ন মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়।

পিছিয়ে পড়া দরিদ্র চা শ্রমিকদের সন্তানদের জীবনমান উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসচেতনতায় সমাজের সবার বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করা প্রয়োজন। চা-বাগানের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিজ্ঞান খুবই কম। তাদের আইটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা প্রয়োজন, কিন্তু সুযোগের অভাবে হাজারো শিক্ষার্থী পিছিয়ে রয়েছে এ ধরনের উন্নয়নের ক্ষেত্র থেকে। যদি একটা আইসিটি ল্যাব তৈরি করার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে সবাই পারবে বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে। চা-বাগানের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা ভালোভাবে চালিয়ে যেতে প্রয়োজন একটা সুন্দর মুহূর্তের, যা ছাত্র-ছাত্রীরা একটা পাঠাগারের মাধ্যমে পেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের রেফারেন্সের জন্য একাডেমিক বইয়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে, যা একটা লাইব্রেরি বা পাঠাগারের মাধ্যমে পেয়ে থাকে ছাত্র-ছাত্রীরা। এই সুবিধা থেকে চা-বাগানের ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত। এই উন্নয়নের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চা -বাগানে একটা লাইব্রেরি স্থাপন করা জরুরি প্রয়োজন।

সংস্কৃতির আধার চা-বাগানগুলো। প্রতিটি চা-বাগানের মধ্যে ৯৪-৯৫টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের বসবাস, যাদের নিজস্ব কৃষ্টি, আচার-আচরণ রয়েছে। এসবের বিকাশের জন্য প্রয়োজন একটা কালচারাল একাডেমি। বর্তমান চাকরির প্রতিযোগিতার বাজারে অনেক পিছিয়ে রয়েছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর চা শ্রমিকের সন্তানরা। তাদের তুলে ধরতে প্রয়োজন আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সুবিধাসংবলিত একটি জব প্রিপারেশন হোম, যার কল্যাণে তারা তাদের চাকরিক্ষেত্রে প্রবেশের পথ সহজ করতে পারবে। আমরা যদি স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের করুণ দৃশ্যই চোখে পড়ে। প্রত্যেক মানুষের উন্নত প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দরকার একটা ক্লিনিক, যার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়া যাবে।

চা-বাগানের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে, যাদের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারবে চা-বাগানের মানুষ। বাংলাদেশের প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো চা-বাগানে মোট ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেই সেই বাগান কর্তৃপক্ষকে সেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে—এমন নিয়ম থাকলেও চায়ের রাজধানীখ্যাত জেলা মৌলভীবাজারের বেশির ভাগ চা-বাগানেই মালিকপক্ষ মানছে না সেই আইন। সরকারিভাবে এখানকার চা-বাগানগুলোতে স্কুল তৈরি করা হলেও জনসংখ্যার অনুপাতে তা একেবারেই অপ্রতুল। আবার স্কুলগুলোর শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পিছিয়ে পড়া চা জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়।

চা-বাগান এবং নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সুবিধাবঞ্চিত সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি ও প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে তাদের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে সরকার শিক্ষা খাতের ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করছে। শিশুদের শিক্ষায় উৎসাহ ও তাদের স্কুলমুখী করতে বিদ্যালয়ে খাবার, বই-খাতা সরবরাহ, যাতায়াতসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি পরিকল্পনায় রয়েছে। তবে সমাজের বিত্তশালীসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এ অবস্থার উন্নয়নের জন্য।

চা-বাগানের শিশুরাও এ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। চা শ্রমিকের পরিবারের আমানত শূন্যের কাছাকাছি। কারণ তাঁরা তাঁদের সন্তানের পড়াশোনা করানোর জন্য ভালো প্রাইমারি স্কুল পাচ্ছেন না। ভালো ভালো স্কুলগুলো শহরের ভেতরে, যাতে পড়াশোনার খরচ অনেক, একজন চা-বাগানের মা-বাবার পক্ষে খরচ চালানো অসম্ভব। তাই এই সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে এবং সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

একজন চা শ্রমিক দৈনিক মজুরি পান মাত্র ১২০ টাকা। এই মজুরি দিয়ে দুবেলা খাবারই জোগাড় হয় না, আর সন্তানের শিক্ষার আয়োজন করা তা প্রায় অসম্ভব। এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্কুলের মাসিক বেতন, বিভিন্ন ফি, বাধ্যতামূলক কোচিং, শিক্ষা উপকরণ ইত্যাদি আয়োজন নিশ্চিত করে বাগানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আবার যে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী স্কুলের সীমা অতিক্রম করে, তারাও আর্থিক অসংগতি, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিদূর এগোতে পারে না। ফলে যুগ যুগ থেকে চা জনগোষ্ঠী সমাজ সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। তাই চা-বাগানে শিক্ষার ন্যূনতম আয়োজন আজ পর্যন্ত নিশ্চিত হলো না, কেন হলো না এর উত্তর নেই? গত দেড় শ বছরে অনেক কিছু পাল্টালেও চা জনগোষ্ঠীর এই জীবন আজও পাল্টায়নি।

লেখক : হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049538612365723