খালেদা জিয়াকে কটূক্তিকারী ক্যাডাররা ডিআইএতে পুরস্কৃতছাত্রলীগ নেত্রীরাও স্কুল-মাদরাসা অডিটের দায়িত্বে

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক |

তাদের মিছিলের ভাষা শুনে ছি ছিক্কার রব উঠেছিলো শিক্ষাসহ সচেতন সব মহলে। তারা সবাই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার। গত ৪ আগস্ট তারা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে মিছিল করেন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর চট্টগ্রামের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তি দাবির পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও অশালীন বাক্য ব্যবহার করেন। গত পাঁচ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ওই মিছিলকারীদের শাস্তি দাবি করেন শিক্ষা ক্যাডারের নিরপেক্ষ এবং বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা। 

নতুন পরিচালককে ফুল দিয়ে বরণ করে  নেওয়া
নতুন পরিচালক কাজী মো. আবু কাইয়ুমকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন মনকিউল, আসমা ও মুনিরাসহ অনেকে 

তারা আশা করেছিলেন, কিছু একটা শাস্তি হবে। গত ২৪ আগস্ট বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত শিক্ষা ক্যাডার অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুমকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) পরিচালক নিযুক্ত করা হলে সে আশার পালে আরো হাওয়া লাগে।  
কিন্তু না, বিএনপি বিরোধীরা বিএনপিপন্থীর কাছেই পুরস্কৃত হয়ে চলেছেন। 

জানা গেছে, দেশের প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় গিয়ে নিজেদের ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ পরিচয় দেন ডিআইএতে বদলিভিত্তিক পদায়ন পাওয়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। একেকজন কর্মকর্তাকে প্রতিটি ট্যুরে কমপক্ষে দশটি করে প্রতিষ্ঠান অডিট/পরিদর্শন অথবা তদন্ত করতে পাঠানো হয়। ডিআইএতে কর্মরত এসব শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কাছে জম হিসেবে পরিচিতি। অভিযোগ আছে, একবার তারা কোনো প্রতিষ্ঠানে তদন্ত, অনুসন্ধান, পরিদর্শন বা অডিটে গেলে সেই প্রতিষ্ঠানকে গুনতে হয় কমপক্ষে চার লাখ টাকা। এককালীন টাকা দেওয়ার সক্ষমতা না থাকলে এমপিওর (বেতনভাতার সরকারি অংশ) চেক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধান সব সহকর্মীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেন বলেও জোরালো অভিযোগ আছে। 
 পরিচালক কাজী মো. আবু কাইয়ুম গত ২ সেপ্টেম্বর আদেশ জারি করেন, ডিআইএতে শিক্ষা সহকারী পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আসমা আক্তার ও সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরা মুর্শেদ ৫ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার সাভার ও ধামরাই উপজেলার ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। এগুলো হলো- সাভারের ১. মোহাম্মদ আলী ইয়াকুব আলী স্কুল এন্ড কলেজ ২. সাভার টেকনিক্যাল এন্ড বি. এম. কলেজ ৩. কোনডা উচ্চ বিদ্যালয় ৪. আলহাজ্ব জাফর বেপারী হাইস্কুল, ৫. শিমুলিয়া এস. পি. হাইস্কুল ও ৬. নয়ারহাট গণ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল এবং ধামরাইয়ের ৭. ঈশান নগর দেলধা শাহক্বারী ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা ৮. নান্নার নূরুল হক দারুল ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসা, ৯. আমরাইল সিদ্দিকীয়া আলিম মাদরাসা ও ১০. কাকরান দাখিল মাদরাসা। 

আরো পড়ুন: 

ঘুষকাণ্ড চাপা দিয়ে স্কুল অডিটে মনকিউল

ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে 

সরকারি কলেজের শিক্ষকরা জানান, এই দুই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী ও নেতার স্ত্রী। তাই তাদেরকে ঘুষের খনি ডিআইএতে পোস্টিং দেওয়া হয়।  এদের মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কটূক্তিকারী আসমা আক্তারের বিরুদ্ধে অডিটে গিয়ে ঘুষ দাবি ও শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ আছে। প্রায় দেড় বছর আগের সেই অভিযোগের তদন্ত এড়াতে তিনি মাসের পর মাস ছুটি কাটিয়েছেন। কখনো মাতৃত্বকালীন আবার কখনো হুদাই ছুটি। গত সপ্তাহে ওই তদন্তের ফাইলই গায়েব করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আসমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের ফাইল ডিআইএতে নেই! ছাত্রলীগের কোটায় তিনি চাকরি পান বলেও জোর অভিযোগ রয়েছে। অপর কর্মকর্তা মনিরা মুর্শেদেরও ছাত্রলীগের কোটায় চাকরি হয় বলে অভিযোগ আছে। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সোহানের স্ত্রী। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অশালীন কথা তিনিও বলেছেন। সরকারি কলেজের শিক্ষক কিংবা ক্যাডার কোনোটিরই বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে নেই। এখনো ছাত্রলীগই রয়ে গেছেন।  তাদের সিনিয়র সহকর্মীরাই সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ প্রমাণসহ হাজির করেছেন। 

আওয়ামী লীগ আমলের দাপুটে এই কর্মকর্তাদের ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়ায় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বিস্মিত হয়েছেন। একাধিক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলছেন, আমরা যাদের শাস্তি দাবি করেছি, যারা ক্যাডার কর্মকর্তা তো দূরের কথা, প্রজাতন্ত্রের কোনো ধাপের কর্মচারী যে আচরণ করতে পারেন না, তারা তাই করেছেন, তাদেরকে এভাবে পুরস্কৃত হতে দেখে আমরা স্তম্ভিত। 
যদিও এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে আসমা আক্তার ও মনিরা মুর্শেদ দুজনেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে কীভাবে দশ স্কুল পরিদর্শন ও অডিটের অনুমতি পেলেন জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি।  
অভিযুক্ত ডিআইএ কর্মকর্তাদের অডিটের আরো খবর জানতে চোখ রাখুন দৈনিক আমাদের বার্তায়

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0021510124206543