জনতার জয়

প্রফেসর ড. মো. আমিনুল হক ভূইয়া |

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা এগিয়ে গেলো। সেই সঙ্গে জয় হলো জনতার, জয় হলো গণতন্ত্রের। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগ এর উন্নয়নের পক্ষেই থাকলো। এ ধারা অব্যহত থাকলে, ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে এদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছবে সে আশাবাদ দেশবাসীর। প্রাচীন গ্রীসে গণতন্ত্রের যে বীজ বপন করা হয়েছিলো আজ তা ফুলে ফলে মহীরূহ হয়ে বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলছে। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময়ে রাজা, বাদশাহ ও জমিদারদের শাসন  ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়, কিন্ত জনতার কোনো অংশগ্রহণ সাবলীলভাবে প্রতীয়মান হতো না। ফলে সে প্রথার সুফল জনতা অনেক সময় পায়নি। গণতন্ত্র হরো এমন একটি ব্যবস্থা,  যেখানে জনগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করতে এবং এর সুফল ভোগ করতে পারেন। জনতা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়।

ভারতীয় কংগ্রেস একসময় বৃটিশ শাসনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ফলস্বরূপ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-পাকিস্তান নামে দু’টি আলাদা সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের প্রথম গর্ভনর জেনারেল হন।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়, পাকিস্তান তাদের শাসন প্রক্রিয়ায় ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসকদের মধ্যে গণতন্ত্রকে লালন করার বা তার বিকাশ ঘটানোর প্রবণতা খুব একটা দেখা যায়নি কখনই। তাদের বেশির ভাগই ছুঁটেছেন কেবল ক্ষমতার পেছনে। এই ক্ষমতাকে তারা মনে করেছেন নিজের জন্মগত কিংবা পারিবারিক অধিকার। আবার কারো কারো জন্য এই ক্ষমতা কেবলই ব্যবসায়ে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। পাকিস্তানের ২২ পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সমগ্র পাকিস্তানের শোষণ বঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এরপর এক দীর্ঘ ইতিহাস। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের মাধ্যমেই আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩ টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে বলে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছেন। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভোটারের ৪০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ ভোট পড়ে। আর এবারের নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। 

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল তাদের প্রার্থী দিতে পারেননি বরং নির্বাচন প্রতিহত করার প্রয়াস চালায়। 

সম্প্রতি বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের চ-কোচের মাঝামাঝি থেকে অগ্নিসংযোগ করা হয় যা অত্যান্ত ন্যাক্কারজনক। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের অনতিবিলম্ব শাস্তির আওতায় আনা উচিত। রেলপুলিশ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছেন। ইতোমধ্যে এসব সংস্থা ১৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, ইতোমধ্যে ৪ জন সরাসরি আগুন দেয়ার কাজে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে প্রথম রেললাইন চালু হওয়ায়, চন্দ্রিমা চৌধুরীসহ আরো অনেকেই প্রথমবার ভ্রমণ করেছিলেন বেনাপোল এক্সপ্রেসে কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের,  হয়তো তারা অনেকেই আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিলো, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির রাজনৈতিকভাবে জনসম্পৃক্ততা থাকায় বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে জয় লাভ করে। এরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনার ধারক ও বাহক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নৌকার ভোটাদের বিকল্প প্রজন্ম, আগামীতে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে এ কামনা নিরন্তর। সত্যিকার অর্থে স্বপক্ষ বিপক্ষ বলতে কিছুই নেই। সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষক হতে হবে। স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যারা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত, তাদেরই এগিয়ে যাওয়ার সময়। বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে এবং ইস্যু তৈরি করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে পেছনে ফেলার সুযোগ এখন আর নেই। বিএনপির অবরোধ, অসহযোগ এবং অগ্নিসংযোগের বিষয়টি নিয়ে জনগণ এখন উদ্বিগ্ন। আশা করি আগামী দিনে বিএনপি তাদের শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় শামিল হবে।

সর্বমোট ২৮টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হলো। কেউ কেউ বলছে, এটা ডামি নির্বাচন যেখানে ৪১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। যারা এ নির্বাচনকে  প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনের আওতায় আনা অবশ্য করণীয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা টানা ৪র্থ বারের মতো জনগণের সেবা করার দায়িত্ব পেলেন এবং পঞ্চমবার বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। নব দায়িত্বে বাংলাদেশ ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিগণিত হবে, এই প্রত্যাশা নিরন্তর। গ্রামে গঞ্জে হাটে মাঠে যে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে প্রার্থীদের ভোট দিতে দেখা গেছে, তাতে গণতন্ত্রের বিজয়, জনগণের বিজয়। বিএনপি এবং তাদের সমর্থনকারী দলগুলো নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। আশা করছি সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক গতীশীলতায় এগিয়ে যাবে।

শিক্ষাবিদ হিসেবে আমার প্রত্যাশা, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তিপ্রদান কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত হবে। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে এবং উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, তরুণদের বাংলাদেশ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বাংলাদেশ।
জনতাই শক্তি এবং সততাই এর ভিত্তি। জনতার দেয়া ম্যান্ডেট অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী দেশর্তন শেখ হাসিনা আগামী পাঁচ বছর সমৃদ্ধি ও গৌরবের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন, এই প্রত্যাশা করছি। জনতার এই জয় অব্যাহত গৌরবে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করবে, ইনশাআল্লাহ।

লেখক: উপাচার্য, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

         


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0021657943725586