বিসিসির অহেতুক হস্তক্ষেপদুই বছরেও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি প্রাণিসম্পদ বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বরিশাল সিটি করপোরেশনের অহেতুক হস্তক্ষেপের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র প্রাণিসম্পদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র নির্মাণ কাজ গত দু’বছরেও শুরু করা যায়নি। ফলে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ পুরো প্রকল্পটির ভবিষ্যতই এখন অনিশ্চয়তার কবলে। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছাতেই বরিশালের আমানতগঞ্জে এই প্রাণিসম্পদ ইনস্টিটিউটটি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল হক বছর দুয়েক আগে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ নির্মাণ কাজেরও সূচনা করেছিলেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর অন্তত ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী প্রাণিসম্পদের ওপর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হবার সুযোগ পেতেন। এখানে রাজস্ব খাতে প্রায় ৫০ জন জনবল নিয়োগ ছাড়াও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আরও অন্তত ২৫ জনের চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হবার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণিসম্পদ চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনা হত।

সরকারের নিজস্ব তহবিলে ২০২০ সালের দিকে একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল, সিলেট ও লালমনিরহাটে ৩টি ‘ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়ন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-আইএলএসটি’ স্থাপনের প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী কমিটি-একনেক। প্রকল্পের আওতায় বরিশাল মহানগরীর আমানতগঞ্জে সরকারি হাঁস-মুরগির খামারের অভ্যন্তরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অব্যবহৃত জমি থেকে ৫ একর জমি প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্দিষ্ট করে বরাদ্দ করে মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথমে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরে অবকাঠামো নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাছাই শেষে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রী পরিষদ কমিটির অনুমোদন লাভ করে। ২০২১ সনের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি ঐ বছরেরই শেষভাগে কাজ শুরু করলেও আকস্মিকভাবে সিটি মেয়র এক রাতে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন বলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। তবে নগর ভবন থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধ করতে কোন চিঠি দেয়া না হলেও সেই থেকে অদ্যাবধি সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রকল্পটির পরিচালক ছাড়াও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করা হলে সকলেই সিটি মেয়রের মৌখিক নির্দেশে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছে বলে স্বীকার করেন।

তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের স্থানীয় পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় অফিসসহ মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার পরে সেখানে থেকে বরিশালের জেলা প্রশাসনকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সে আলোকে প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালেও পরবতির্তে আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালকসহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় পরিচালকের সঙ্গে আলাপ করা হলে সবাই বরিশালে ‘আইএলএসটি’র কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করলেও তা থেকে উত্তরণের বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। তবে একই প্রকল্পের আওতায় বরিশাল বাদে অন্য দুটি স্থানের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার সীমারেখা থাকলেও বরিশাল ‘আইএলএসটি’র ভূমি উন্নয়ন কাজই শুরু করা যায়নি। সিটি মেয়র ‘জলাশয় ভরাট করে কোন অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না’ বলে মৌখিকভাবে নিষেধ করে প্রকল্প এলাকায় ব্যাবহৃত সব মেশিনারীর চাবি নিয়ে গেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে বরিশাল নগরীর ব্যক্তিগত পুকুর, জলাশয় প্রতিনিয়ত ড্রেজার দিয়ে কীর্তনখোলা নদী থেকে বালি তুলে ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হলেও তা বন্ধে সিটি করপোরেশন কোন ভূমিকা রাখেনি।

সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দীর্ঘদিন যাবত বরিশালে অনুপস্থিত থাকায় এ বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে সরকারের নিজস্ব জমিতে সরকারেরই একটি স্থাপনা নির্মিত হবে এবং তা কোন মতেই জলাশয় ভরাট করে নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে কোন বাঁধা আসার কথা নয়। তদুপরি পরিবেশের বিষয়টি দেখভাল করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস রয়েছে। এখানে সিটি করপোরেশনের হস্তক্ষেপ অযাচিত বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

প্রকল্পটির আওতায় বরিশাল ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টকে একাধিক একাডেমিক ভবন এবং ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল ছাড়াও অফিস ভবন, টিচার্স ডরমেটরি, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, হেলথ কেয়ার সেন্টার ছাড়াও একটি অত্যাধুনিক প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল স্থাপনের কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুুধ, ডিম ও মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলে এটি হবে প্রাণিসম্পদ খাতের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে নানা অজানা কারণে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ কবে শুরু ও শেষ হবে তা এখন আর বলতে পারছেন না কেউ। পাশাপাশি গত প্রায় দু’বছর কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে নিশ্চিত নির্মাণ কাজে সংয়শ্লিষ্টরা। কিন্তু নির্মাণ কাজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার দায় কার এমন প্রশ্নও এখন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056619644165039