মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শফিউল আলমের বিরুদ্ধে শিক্ষক প্রশিক্ষনের টাকা আত্মসাৎ, ঘুষ আদায়, অশোভন আচরণ, বই বিতরণে টাকা নেয়া, এবং সহকর্মীদের চাকরিচ্যুতির হুমকিসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তার এই কর্মকাণ্ডে দৌলতপুরের শিক্ষক সমাজের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

উপজেলার বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, গত জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থই আত্মসাৎ করেছেন এই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা। 

প্রশিক্ষণে উপজেলার ১ হাজার ৮৪ শিক্ষক এবং ৪২ জন প্রশিক্ষকের নাস্তা বাবদ ৮০ টাকা করে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও শফিউল আলম ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে নিম্নমানের নাস্তা পরিবেশন করে বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি টাকা আত্মসাৎ করেন বলে জানিয়েছেন ওই প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া শিক্ষকেরা।

শিক্ষা অফিসের কর্মচারীরা থাকলেও তাদের বদলে ব্যাক্তিগত লোকদের দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল টাকা আত্মসাতের জন্য নিম্নমানের ও কম মুল্যের নাস্তা কেনেন। 

অধিকাংশ শিক্ষক ভয়ে কিছু না বললেও প্রশিক্ষণ নেয়া অনেকেই নিম্নমানের নাস্তার বিষয়ে আপত্তি জানান। কিন্তু শফিউল কারো আপত্তি আমলে না নিয়ে উল্টো শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। 

এদিকে প্রশিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন প্রতিটি প্রশিক্ষণ কক্ষের জন্য উপকরণ বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও নামমাত্র উপকরণ সরবরাহ করে প্রায় পুরো টাকাই নিজের পকেটে পুরেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

বরাদ্দের অধিকাংশ টাকাই আত্মসাৎ করায় পুরো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়েছে বলে শিক্ষকদের দাবি। 
উপজেলার একাধিক নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের জানান, শফিউল আলম প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। 

শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কোনো কাজে তাকে ফোন করলে অধিকাংশ সময়ই তিনি ফোন রিসিভ করেন না। হঠাৎ ফোন রিসিভ করলেও দুর্ব্যবহার করেন এবং হয়রানিসহ আর্থিক সুবিধা নেয়ার জন্য অফিসে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

একই আচরণ করেন তার নিজ দপ্তরের অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গেও। যেকোনো সময় চাকরি খেয়ে নিতে পারেন বলে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, উচ্চতর স্কেল, বিএড স্কেল, নতুন এমপিও-এর কাগজপত্র ফরোয়ার্ডের জন্য তিনি শফিউল মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছেন। টাকা না দিলে কাগজপত্রের ভুলভ্রান্তির অভিযোগ তুলে শিক্ষকদের হয়রানিসহ দুর্ব্যবহার করেন। 

সম্প্রতি একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে তিনি ১ লক্ষ টাকা দাবি করেছেন বলে জানা গেছে। সরকারি বই বিনামুল্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে বকশিশের নামে টাকা আদায় করেছেন। 

শফিউল আলম উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ক্রীড়া ও স্কাউট ফিস বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলন করেন এবং এসব টাকাও নয়ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খেলাধুলার জন্য ভেন্যু পরিচালনা খরচ পরিশোধ না করার অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রীড়া শিক্ষক। খরচের টাকার চাওয়ায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন এই কর্মকর্তা।   

শুধু শিক্ষকেরাই নন, শফিউল আলমের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারাও। উপজেলা পরিষদের কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদবী হওয়ার পরও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে বড় মাপের কর্মকর্তা মনে করেন শফিউল আলম। 

শিক্ষকদের অভিযোগ সম্পর্কে তার ভাষ্য জানতে চাইলে শফিউল আলম সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণের অনারিয়ামের হার্ড কপি, সফ্টকপি উপরে পাঠানো নিয়ে কিছুটা ঝামেলা ছিলো। তবে তা সুরাহা হয়ে গেছে। 

শিক্ষকদের সঙ্গে থে আচরণগত সমস্যা কিছু থাকতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন এবং আগামীতে এ ব্যাপারে আরো সচেতন হবেন বলেও তিনি জানান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড - dainik shiksha ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি - dainik shiksha ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট - dainik shiksha মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা - dainik shiksha অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল - dainik shiksha ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.01199197769165