মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ৯ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেওয়া শুরু করেন।
২২২ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেছেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার।
এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত বছরের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়েছিল। পরে চলতি মাসের ৯ তারিখে রায়ের জন্য এদিন ঠিক করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের খলিলুর রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে আজ।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেন। এর আগে রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও শুনানি শেষে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছিল। এ মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন- সুলতান মাহমুদ সীমন,সাহিদুর রহমান,রেজিয়া সুলতানা চমন। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস শুকুর খান ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন সাংবাদিকদের বলেন, আজ (১১ ফেব্রুয়ারি) মামলাটির রায় ঘোষণা করা হবে। আশাকরি ট্রাইব্যুনালের রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। তিনি জানান, এ মামলায় ১১ জন আসামি ছিলেন। বিচার চলাকালীন দুজন মারা যান। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা সহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জড়িত থাকার চারটি অভিযোগে ময়মনসিংহের ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছিলো ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে গ্রেফতার আছেন- ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া গ্রামের মো. খলিলুর রহমান মীর (৬২), একই গ্রামের মো. সামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম (৬৫), একই গ্রামের মো. আব্দুল্লাহ (৬২), মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলী (৭৪)। এ ছাড়া আসামি আব্দুল লতিফ স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। তারা কারাগারে রয়েছেন।
গ্রেফতারের পর বিচারচলাকালীন মো. আব্দুল মালেক আকন্দ ওরফে আবুল হোসেন ওরফে আবুল মেম্বার (৬৮) মারা যান। আর পলাতক অবস্থায় মারা যান নুরুল আমীন শাজাহান। এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন- এএফএম ফায়জুল্লাহ, মো. আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল, সিরাজুল ইসলাম ও মো. আলীম উদ্দিন খান। এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চারজনকে হত্যা, ৯ জনকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া গ্রাম ও টাঙ্গাব ইউনিয়নের রৌহা গ্রাম এলাকায় তারা অপরাধ করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অক্টোবর থেকে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের মত অপরাধের তিনটি অভিযোগ এনে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগ গঠনের সে বছরের ১০ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শুরু হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সহ ১৮ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি।
