শিক্ষক কল্যাণট্রাস্ট ফান্ডে এবার রেজিস্ট্রেশন থেকে চাঁদা, প্রতিবাদ

লামিয়া আক্তার, দৈনিক আমাদের বার্তা |

আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ভর্তি ফির সঙ্গে ১০০ টাকা করে নেওয়া হলেও এবার নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফির সঙ্গেও এ বাবদে অতিরিক্ত অর্থ আদায় শুরু হয়েছে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। 

চলতি বছর প্রথমবারের মত বেসরকারি স্কুলের নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে ১০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে।  

অভিভাবক ও শিক্ষক নেতারা শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র প্রিন্ট জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেছেন, সরকার হাবিজাবি প্রকাল্পে হাজার কোটি টাকা খরচ করে অথচ কোষাগার থেকে এমপিও সুবিধা দেওয়া শিক্ষকদের অবসরের পর এককালী কিছু টাকা দিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ভর করছে। তারা বলছেন, অবসর সুবিধার টাকা দেওয়াটাও সরকারের দায়িত্ব। 

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে কল্যাণ ট্রাস্ট চালুর সময়ের সিদ্ধান্ত থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে কল্যাণ ও অবসসর ফান্ডের জন্য বেসরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফির সঙ্গে ১০০ টাকা করে আদায় শুরু হয়। প্রথম টাকা আদায় হয়  ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর চলতি বছর থেকে বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিকেও ভর্তিতে এ খাতে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়। ফি বছর দিতে হবে। তবে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে এই খাতের জন্য অর্থ কেটে রাখা এবারই প্রথম।

জানতে চাইলে অবসর ও কল্যাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা আমাদের বার্তাকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষাবোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চঁাদা তুলে তা জমা দেওয়া। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রেজিস্ট্রেশনেও অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ১০০ টাকা ফি আদায় শুরু হয়েছে।”

গত কয়েক বছরের তুলনায় ১২৫ টাকা বাড়িয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন ফি ২৯৬ টাকা নির্ধারণ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড। শুক্রবার থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ফরম পূরণ ও টাকা জমা দেওয়া যাবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে প্রথমে নির্ধারিত তারিখের পরে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগের কথা বলা না হলেও গত ১৭ অক্টোবর সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে ১৪০ টাকা বিলম্ব ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়া হয়।

এবার রেজিস্ট্রেশন ফি ২৯৬ টাকা নির্ধারণ হলেও গতবছর এই ফি ছিল ১৭১ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের থেকে এবার ১২৫ টাকা ফি বেড়েছে।

এর মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের ১০০ টাকা ছাড়াও আরও একটি খাতের ফি বাড়ানো হয়েছে। আর আরেকটি খাত নতুন যুক্ত হয়েছে।

আগে স্কাউটস ফি ১৫ টাকা থাকলেও চলতি বছর তা বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে এবং আরও ১৫ টাকা ‘গার্লস গাইড ফি’ হিসেবে নতুন যুক্ত হয়েছে মোট ফির সঙ্গে। এর সঙ্গে ৮০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি, ৫০ টাকা ক্রীড়া ফি, পাঁচ টাকা বিজ্ঞান প্রযুক্তি ফি, ১৬ টাকা রেডক্রিসেন্ট ফি ও পাঁচ টাকা বিএনসিসি ফি দিতে হবে।

জানতে চাইলে নজরুল শিক্ষালয়ের একজন অভিভাবক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “শিক্ষকদের অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। এ খাতের টাকা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের। 

ঢাকার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিম্নআয়ের অভিভাবক মোহাম্মদ রুম্মান রহমান বলেন, “সরকারের উচিত এই ধরনের ফি শিক্ষার্থীদের ওপর না চাপানো।”

শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ টাকা আদায়ের বিষয়ে দৈনিক আমাদের বার্তার উপদেষ্টা সম্পাদক ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, এর আগে যখন শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফির সঙ্গে এ খাতে টাকা আদায় করা শুরু হয় তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছি। এবার রেজিস্ট্রেশনেও এ খাতে টাকা আদায় শুরু হল। এটারও বিরোধীতা করছি। এমপিও শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ পেনশন দাবি করছি বহু বছর যাবত।  

“এটি একদিকে যেমন অনৈতিক, অপরদিকে শিক্ষকদের আত্মমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করে। শিক্ষকদের সুবিধার জন্য বাচ্চাদের কাছ থেকে কেন টাকা নিতে হবে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024659633636475