শিক্ষার উন্নয়ন বাজেটের বেশিরভাগ বরাদ্দ পায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। আর এই দপ্তরের পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিলো সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের বিতর্কিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভাই টিপুর হাতে। টিপু এই দপ্তরের বড় কর্তা সেজে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিমার্ণ কাজের জন্য ২৫ শতাংশ কমিশন নিতেন। তাকে কমিশন না দিয়ে কোনো ঠিকাদার কাজই পেতেন না।
সম্প্রতি সাবেক বিতর্কিত এই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য গণমাধ্যমের উঠে এসেছে। স্থানীয় অসংখ্য মানুষ মুখ খুলেছে দীপু ও টিপুর চাঁদাবাজি নিয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, নোট-গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও সারা দেশে দেদার বিক্রি হচ্ছে এসব বই। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী নোট বা গাইডের ওপর নির্ভরশীল। মুখে নোট-গাইডের বিরোধিতা করলেও দীপু মনি নোট-গাইড বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন এক প্রকাশনীর মালিক। সেই প্রকাশনীর মালিকের বাড়িও চাঁদপুরে। ঢাকার এক নোট-গাইড প্রকাশক জানান, ৩ মাস পরপর অন্তত ২৫ কোটি টাকা কমিশন নিতেন দীপু মনি।
এ ছাড়াও ১৬ বছর ধরে নানা পদ-পদবি পেয়ে তারা বেশ বেপরোয়া ছিলেন। এ ছাড়াও দীপু মনি ও তার ভাই টিপুর হাত থেকে রক্ষা পায়নি রাজধানী ও চাঁপুরের ছোট-বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
নিজ জেলায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুধু জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯ কোটি টাকা দুর্নীতির পাঁয়তারা করেন দীপু মনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেন তার নিকটাত্মীয়রা।
তারা ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জায়গা ঠিক করে নিজেদের নামে দলিল করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে সেসব জমিই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করে এবং জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে। সেখান থেকে ৩৫৯ কোটি অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়।
এ অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস। তিনি চাঁদপুরে দীপু মনির ভাইসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর জমি দখলের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য আলোচিত ছিলেন। টিপুসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ভুয়া দলিলের মাধ্যমে ৪৮ একরের বেশি জমির দখল নেয়ার প্রতিবাদ জানানোর ৪৮ ঘণ্টা পর তাকে নেত্রকোনায় বদলি করা হয়। পরে সরকার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সেই জায়গায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়টি বাতিল করে।
এ ছাড়াও চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে ফ্রি-স্টাইলে বালু উত্তোলনেও চোখ ছিল দীপু মনির। তার ঘনিষ্ঠ লোক হিসাবে পরিচিত লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সেলিম খানকে সেই বালু তুলতে উৎসাহী করেন তিনি।
দীপু মনির নির্বাচনি এলাকা চাঁদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সময় থেকেই তার সঙ্গে আমার দূরত্ব। মন্ত্রীর কাছে কোনো বিষয়ে একটি তদবিরও করেননি বলে তিনি জানান।