সামষ্টিক মূ্ল্যায়নই পরীক্ষা

রুম্মান তূর্য |

নতুন শিক্ষাক্রমে মেধা যাচাইয়ের সুযোগ বা পরীক্ষা নেই বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তবে নতুন শিক্ষাক্রমে মেধা যাচাইয়ের সুযোগ না থাকার বিষয়টি ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্তারা ও অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষকরা। তারা বলছেন, খাতায় প্রশ্নে উত্তর লিখে যে পরীক্ষা নেয়ার চল ছিলো, সেটিতে পরিবর্তন আনা হলেও মেধাযাচাই ঠিকই থাকছে। এ শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।  আগে শুধু খাতায় লেখা উত্তরে শিক্ষার্থীর মেধার মূল্যয়ন করা হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে এর সঙ্গে আরো বেশি কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন কমিয়ে ও শিখনকালীন মূল্যায়নে জোর দেয়া হয়েছে। তবে প্রচলিত পরীক্ষা না থাকায় কিছু অভিভাবক বিভ্রান্ত হচ্ছেন, অন্যকেও বিভ্রান্ত করছেন।

অভিভাবকদের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এনসিটিবি বলছে, বলা হচ্ছে এ শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না। এটি মিথ্যাচার। মানুষকে বিভ্রান্ত করবার জন্য এসব বলা হচ্ছে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে, নিজেরা সক্রিয়ভাবে পড়বে, শিখবে। গ্রুপ ওয়ার্ক করে আবার তা নিজেরাই উপস্থাপন করবে। শুধু জ্ঞান নয়, দক্ষতাও অর্জন করবে। আর মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। আবার ষান্মাসিক মূল্যায়ন এবং বার্ষিক মূল্যায়নও হবে। কাজেই পরীক্ষা ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষার ভীতি থাকছে না। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং না হওয়াও আছে। শুধু তাই নয়, পারদর্শিতার সাতটি স্কেলে তাদের রিপোর্ট কার্ডও আছে।  

জানতে চাইলে এনসিটিবির শিক্ষাক্রম উইংয়ের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আগে একজন বাচ্চা পুরো বছরে যা পড়তো, তার যাচাই হতো কয়েকঘণ্টার পরীক্ষায়। সে সারা বছর যা শিখেছে তার প্রমাণ রাখতে হতো দুই বা তিন ঘণ্টার একটি নির্দিষ্ট সময়ে। ওই সময়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর খাতা লিখে দিতেন শিক্ষার্থীরা। আর ওই সময়ে শিক্ষার্থী কি লিখলো তার ওপর তার মেধা যাচাই করতেন শিক্ষকরা। কিন্তু ওই দুই বা তিন ঘণ্টায় শিক্ষার্থী অসুস্থ থাকতে পারে। তার মন খারাপ থাকতে পারে, বা সে ভয় পেতে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের পরীক্ষা খারাপ হতো। তবে একজন শিক্ষার্থী সারাবছর যা শিখলো সেটি ওই নির্দিষ্ট সময়ে মূল্যায়ন করা যায় না। তাই শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই হবে নতুন শিক্ষাক্রমে। আগে মুখস্থবিদ্যা খাতায় লিখতে পারাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও জ্ঞান- এ চারটি দিকের সংমিশ্রণ যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যোগ্যতা নির্ভর শিক্ষাক্রমে আসলে শুধু জ্ঞান বা মুখস্থবিদ্যার পারদর্শিতা যাচাই করে শিক্ষার্থী মূল্যয়নের সুযোগ নেই। 

তিনি আরো বলেন, সামষ্টিক মূল্যায়ন ও পরীক্ষার ধারণা মোটামুটি একই। দুই ক্ষেত্রেই যোগ্যতা বা মেধা যাচাই হয়। কিন্তু আগে প্রচলিত পরীক্ষায় যা মুখস্থ করতো তা লিখে দিতে হতো আর তারপর তাকে নম্বর দেয়া হতো। যেটি পরীক্ষা নামে পরিচিত ছিলো। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের মেধাযাচাইয়ে তার কোনো কিছু করা দক্ষতা, সে জ্ঞানটি কি সে নিলো কি-না তা, সেটি সে করতো পারলো কি-না, গ্রুপে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে করতে পারলো কি-না তা যাচাই করা হয়। যেটি জানে সেটা করতে পারে কি-না, তা যাচাই করা হবে এ কারিকুলামে। যেমন- কেমন করে সাঁতার কাটে সেটা বইতে লিখে দেয়া হলো। কিন্তু আসলে সাঁতার পারে কি-না সেটার প্রমাণ পাওয়া যাবে না। সাঁতার কাটলেই জানা যাবে যে সাতার পারে কি-না। স্কুলে-স্কুলে কিন্তু ধারাবাহিক মূল্যায়ন চলছেই। সেইসঙ্গে সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা থাকবে। তবে সেটা আগের মতো তিন বা দুই ঘণ্টার পরীক্ষা না। সেটাও অনেকটা প্রয়োগিক বা প্র্যাকটিক্যাল টাইপের। 

অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান আরো বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন মানেই নম্বর নয়, এখানে মূল্যায়ন হলো শিক্ষার্থী কাজটা দক্ষতার সঙ্গে করতে পারছে কি-না, সে যোগ্যতা আছে কি-না, সেটি জানা। এটা করতে গেলে আসলে তিন ঘণ্টার পরীক্ষায় বোঝা যাবে না। সেজন্য এভাবে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম আসায় এখন এ পদ্ধতি শুরু হয়েছে। আগামী বছর অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম এলে সেখানেও এভাবে মূল্যায়ন হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর বিটিসিএল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বাবুল দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে মেধা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া বদলানোয় অনেকে বিভ্রান্ত। তবে আমার স্কুলে শিক্ষকরা অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ ধরে রেখে বিষয়গুলো বুঝিয়েছেন। ফলে আমার স্কুলের অভিভাবকরা কেউই এ শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি বা বিভ্রান্ত হননি। তবে কিছু স্কুলের অভিভাবকরা হচ্ছেন। নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু খাতায় লেখা নয়, শিক্ষার্থী যা শিখছে তা যাচাই হচ্ছে। বাচ্চা যা শিখলো তা করতে পারছে কি-না তা যাচাই হচ্ছে। বাচ্চা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে তা করতে পারছে কি-না তা যাচাই হচ্ছে। শুধু লেখা বা মুখস্থ করার পারদর্শিতা নয়, সার্বিকভাবে বাচ্চার যোগ্যতা যাচাই হচ্ছে। আমি মনে করি, এটি যুগান্তকারী শিক্ষাক্রম। তবে বুঝতে না পারায় কিছু অভিভাবক বিভ্রান্ত। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049538612365723