হাইস্কুলের অভিজ্ঞতা নিয়ে মাদরাসার সহকারী সুপার পদে নিয়োগের কোনো সুযোগ বর্তমান এমপিও নীতিমালা নেই। তবে এমনটাই ঘটেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গোড়াই পিয়ার পিয়ারিয়া দাখিল মাদরাসায়। এমপিও নীতিমালাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাদরাসাটির সহকারী সুপার পদে নিয়োগ পেয়েছেন মো. একরামুল হক নামের এক প্রার্থী। হাইস্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে সহকারী সুপার পদে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।
মাদরাসার এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, সহকারী সুপার পদে নিয়োগে মাদরাসার সহকারী মৌলভী বা ইবতেদায়ি প্রধান পদের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। মাদরাসার সহকারী সুপার পদে হাইস্কুলে ধর্ম বিষয়ে সহকারী শিক্ষকের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিয়োগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও এমপিও কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
তবে নিয়োগ কমিটি সংশ্লিষ্টদের দাবি, এ সুযোগ আছে, সুযোগ না থাকলে ডিজির প্রতিনিধি বিষয়টি জানাতেন। এ নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরেরই এক কর্মকর্তা। গত এপ্রিল মাসে ওই শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হলেও সম্প্রতি এ বিষয়টি সামনে এসেছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল উলিপুর উপজেলার গোড়াই পিয়ার পিয়ারিয়া দাখিল মাদরাসায় সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম, ডিজির প্রতিনিধি (অধিদপ্তরের অর্থ শাখার উপপরিচালক) মো. আবুল বাসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ মো. তরিকুল ইসলাম, শিক্ষক প্রতিনিধি মোরশেদা বেগম ও মাদরাসার সুপার মো. আবদুস সবুর। ওই পরীক্ষায় নির্বাচিত হন মো. একরামুল হক। তবে নিয়োগে অংশ নেয়া চারজন প্রার্থীই স্কুলের অভিজ্ঞতা নিয়ে ওই মাদরাসায় নিয়োগের আবেদন করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. একরামুল হক প্রায় ১২ বছর চিলমারী উপজেলার ফকিরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। সহকারী মৌলভী ও ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদকে একই পদ ব্যাখ্যা করে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান এমপিও নীতিমালায় এ দুইটি পদের অভিজ্ঞতার শর্তে পার্থক্য আছে।
স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালা ও মাদরাসার এমপিও নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্কুল-কলেজের ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও সহকারী মৌলভী পদে নিবন্ধন প্রক্রিয়া এক হলেও ফাজিলে বা সর্বশেষ শিক্ষা সনদে তৃতীয় বিভাগ থাকলে সহকারী মৌলভী পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে শিক্ষা জীবনে যেকোনো একটি তৃতীয় বিভাগ থাকলে ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, এ নিয়োগে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছেন। সভাপতি ও সুপার টাকা নিয়ে এ নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ পেলেও সহকারী সুপার এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। তিনি এমপিওভুক্ত হতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন।
হাইস্কুলের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে মাদরাসার সহকারী সুপার পদে নিয়োগ নিয়ে জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ও এমপিও কমিটির এক সদস্য দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বর্তমান নীতিমালায় সহকারী সুপার পদে হাইস্কুলের ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদের অভিজ্ঞতায় নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান নীতিমালায় দুটি পদ সম্পূর্ণ আলাদা। ওই পদে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন তিনি এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কেউ এভাবে নিয়োগ দিলে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী সুপার পদে নিয়োগ পাওয়া একরামুল হক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘আমি ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমাদের নিয়োগের সময় সে দুটি পদ একই অভিজ্ঞতার ছিলো। তাই যেটা সহকারী মৌলভী সেটাই ধর্ম বিষয়ে সহকারী শিক্ষক। আর নিয়োগ দিয়েছে কমিটি। কমিটিতে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাও ছিলেন। যদি অবৈধ হতো অবশ্যই তিনি বিষয়টি জানাতেন’।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ মো. তরিকুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সহকারী মৌলভী ও সহকারী শিক্ষক ধর্ম মূলত একই পদ বলে জেনেছি।
তবে বিদ্যামান এমপিও নীতিমালায় এ দুটি পদে নিয়োগের যোগ্যতায় পার্থক্য আছে বলে জানালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে, ডিজির প্রতিনিধিতো এমন কিছু বললেন না।
এ নিয়োগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে মাদরাসার সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসাটির সুপার মো. আবদুস সবুর দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে দাবি করেন, নীতিমালা সহকারী সুপার পদে ধর্ম বিষয়ের সহকারী সুপার পদে নিয়োগের সুযোগ আছে।
পরে নীতিমালায় দুই পদের পার্থক্যের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে, কথা শোনা যাচ্ছে না। আমি পরে আপনার সঙ্গে কথা বলবো’।
হাইস্কুলের অভিজ্ঞতায় সহকারী সুপার পদে নিয়োগের সুযোগ আছে কি-না জানতে চাইলে ওই নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি ও অধিদপ্তরের অর্থ শাখার উপপরিচালক মো. আবুল বাসার দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, এভাবে নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। কেউ এভাবে নিয়োগ পেলে তা বাতিল হবে। তিনি এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না।
গোড়াই পিয়ার পিয়ারিয়া দাখিল মাদরাসায় সহকারী সুপার পদে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকমটা হওয়ার কথা নয়। ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নের আগে বিষয়টি যাচাই-বাছাই হওয়ার কথা। যদি হাইস্কুলের অভিজ্ঞতা নিয়ে কেউ আবেদন করেন তাহলে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন পাওয়ার কথাই না। এটা কিভাবে হলো খোঁজ নিয়ে দেখবো।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।