‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি’ বা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কারণ তারা সরকার থেকে বেতন এবং ভাতা পান, তবে তাদের বদলির কোনো সুব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই নেই।
কেনো এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি সময়ের দাবি:
১. অসচ্ছলতা ও পারিবারিক দুরত্ব:
একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের প্রারম্ভিক বেতন ভাতা খুবই সামান্য। এ দিয়ে ৩০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দুরত্বে থেকে চাকরি করা অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার। তাছাড়া পরিবার-পরিজনদের সাথে মাসে একবার দেখা করতে গেলেই যাতায়াত ভাড়াতেই সব টাকা শেষ। স্বাভাবিক যোগাযোগ না করতে পারায় প্রায়শই পারিবারিক অসন্তোষ, কলহ বিরাজ করে। এমনকি সংসার পর্যন্ত ভেঙে যাওয়ার উদাহরণ রয়েছে। বাবা- মা বা পরিবারের সদস্যের মৃত্যুতেও পাশে থাকার সুযোগ হয়নি।
২. একই স্থানে দীর্ঘসময় ধরে থাকার সমস্যা:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা প্রায়শই এক জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন, যা তাদের কর্মদক্ষতা ও মানসিক সন্তুষ্টির ওপর প্রভাব ফেলে। একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করতে করতে একঘেয়েমি সৃষ্টি হয়, যা শিক্ষার মান উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের বদলির সুযোগ না থাকায় কিছু ক্ষেত্রে কর্মস্থলে অদৃশ্য অসন্তোষ তৈরি হয়, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষক সঙ্কুলান:
দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি এবং সংকট রয়েছে। যদি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা থাকে, তবে দেশের যেখানে শিক্ষকের সংকট রয়েছে, সেখানে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হবে।
৪. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ:
অনেক শিক্ষক তাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে বদলি চান। বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা, স্বাস্থ্যগত জটিলতা বা শিশুদের শিক্ষার সুযোগের অভাবে অনেক শিক্ষককে একটি নির্দিষ্ট স্থানে দীর্ঘদিন অবস্থান করতে হয়, যা তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন:
শিক্ষকদের বদলির সুযোগ তাদের কর্মস্পৃহা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। নতুন পরিবেশে কাজের সুযোগ তাদের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সহায়তা করে, যা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বদলির কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। ফলে তারা নির্দিষ্ট একটি স্কুলে বা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে বাধ্য হন।
সম্ভাব্য সমাধান:
নীতি প্রণয়ন: সরকার যদি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য একটি সুস্পষ্ট বদলি নীতি প্রণয়ন করে, তবে এটি শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়ক হবে।
ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার:
বদলির জন্য একটি অনলাইন আবেদন ব্যবস্থা চালু করা হলে, শিক্ষকদের জন্য প্রক্রিয়াটি সহজ এবং স্বচ্ছ হবে।
স্থায়ী ঠিকানায় বদলি:
শিক্ষকদের যোগ্যতা, বয়স, দূরত্ব, কাজের অভিজ্ঞতা ইত্যাদির ভিত্তিতে শিক্ষকের স্থায়ী ঠিকানায় বদলির সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
বর্তমান সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে। এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষকের সুষম বণ্টন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এই পরিবর্তন যদি কার্যকর হয়, তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্যও একটি সহজ এবং স্বচ্ছ বদলি প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব হবে।
‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি’ সময়ের দাবি এবং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। শিক্ষকদের দক্ষতা, প্রফুল্লতা এবং কর্মস্পৃহা ধরে রাখতে তাদের বদলির সুযোগ দেয়া উচিত, যা শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতিতে সহায়তা করবে।
লেখক: প্রধান শিক্ষক ,রোহিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা