কওমি মাদরাসা নিয়ে সংসদে কথা বলতে গিয়ে মহিলা মাদরাসাগুলো ‘বেশি ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলের এমপি ফখরুল ইমাম। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সরকারে পূর্বানুমতি লাগলেও কওমি মাদরাসা স্থাপনে কোনো অনুমতির দরকার হয় না-সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।
ফখরুল ইমাম বলেন, কওমি মাদরাসা করতে কারো সন্মতি দিতে হয় না। চাইলেই যে কোন জায়গায় এটা খোলা যায়। কিন্তু অন্যকোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পার্মিশনের পর পার্মিশন নিতে হয়। একটা মাদরাসায় কী হয়? ওয়ান-টুতে যারা পড়ে ভোর সাড়ে ৪টার সময়ে উঠে যায়। তারপর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তারা পড়ে। কী পড়াশুনা করে তা জানিনা। সেখানে সিলেবাস ছাড়া অনেক কিছু পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘বেশি ভয়াবহ হচ্ছে মহিলা মাদরাসা। এ মহিলা মাদরাসা এত বিস্তৃত। আমার এলাকায় সব জায়গায় সকাল বেলা উঠে দেখি- এদের চেনা যায় না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরখার ভেতরে এনারা থাকে। তারা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাদরাসায় থাকে। আমার মনে হয় না সেখানে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান শেখানো হয় কিংবা কিভাবে সংসার করতে হবে সেটা শেখায়। অন্য কিছু শেখায়। আমার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যারা আছেন তাদের এটা দেখতে হবে।’
ফখরুল ইমাম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেটা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে একদম ট্রাশিয়ালি পর্যন্ত। এইখানে অনেক ঝামেলাপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা এখন প্রচলিত আছে।
তিনি আরও বলেন, করোনার সময়ে সাধারণ শিক্ষা থেকে ড্রপ আউট হয়ে মাদরাসায় গেছে। যে মাদরাসাগুলোতে একশ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিতে হয়। সেখানে গরিব ছেলেপুলেরা ভর্তি হয়েছে। এর কারণ খুঁজে পাইনি।
প্রাথমিকের পাঠ্য বইয়ে একটি ধর্মগ্রন্থকে বাদ দিয়ে অন্য একটি ধর্মগ্রন্থকে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ তুলে এমপি ফখরুল ইসলাম তিনি আরও বলেন, আমরা দেখি যে শিক্ষা ব্যবস্থাগুলো প্রাইমারিতে আছে সেটা ক্লাস থ্রিতে কী করেছে, ক্লাস টুতে কী করেছে? ‘সবাই মিলে কাজ করি’ শিরোনামে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিলো সেটা বাদ দিয়েছে। থ্রিতে ‘খলিফা আবু বক্কর’ শিরোনামে সংক্ষিপ্ত জীবনী সেটা বাদ দিয়েছে। ক্লাস ফোরে খলিফা হযরত ওমরের সংক্ষিপ্ত জীবনী সেটা বাদ দিয়েছে। ফিফথে ‘বিদায় হজ্ব’ শেষ নবীর জীবনী একটা ছিলো সেটা বাদ দিয়েছে।
তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণিতে ‘বই’ নামে একটা কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেটা ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআ্ন বিরোধী কবিতা। আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘লাল গরু’ নামক একটি ছোট গল্প আনা হয়েছে। যা মুসলিম শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো। তাই গরু জবাই করা ঠিক নয়। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ। সপ্তম শ্রেণির বইতে শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যয়ের ‘লালু’ নামক একটা গল্প ঢুকানো হয়েছে। যাতে শেখানো হচ্ছে হিন্দুদের কালিপূজা ও পাঠবলির কাহিনী। অষ্টম শ্রেণির বইতে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ রামায়ণের সংক্ষিপ্ত রূপ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এইগুলো কীসের আলামত?
তিনি বলেন, আমাদের এখানে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই। কিন্তু একটা ধর্মগ্রন্থকে আপনি বাদ দিয়ে আরেকটা ধর্মগ্রন্থকে আপনি প্রাধিকার দিয়ে সেখানে বিশেষ করে ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, সিক্স, সেভেন, এইট, নাইন পর্যন্ত আপনি সংস্কৃতি বদলের আপনি চেষ্টা করবেন, সেটা কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবশ্যই দেখতে হবে।
ফখরুল ইমামের বক্তব্যের জবাবে জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমার বন্ধু বললেন মেয়েরা বোরখা পড়ে মাদরাসায় লেখাপড়া করে। তাদের তো ইসলামিক ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। একজন কুরআনের হাফেজ হতে হলে মিনিমান ৮ ঘন্টা পড়াশুনা করতে হয়। এটা ধর্মীয় শিক্ষা। সেখানে খোঁচা মারার তোর দরকার নেই। আধুনিক শিক্ষা বানাবেন-হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পরায় ছেড়ে দেবেন তা তো হবে না এদেশে। এগুলে বাদ দিয়ে আসল শিক্ষায় আসেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হাতে সিগারেট দেখা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাতে কাপ আর সিগারেট। ছেলে-মেয়ে হাত ধরাধরি করে হাঁটাহাঁটি করছে, আর সিগারেট খাচ্ছে। এটা কোন সংস্কৃতিতে পড়ে? কোন শিক্ষায় পড়ে? আমরাও তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুনা করেছি। শুধু শিক্ষার মান নয়,নৈতিকতাও কমেছে। এদিকে নজর দিতে হবে।
একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকেও শক্ত হতে হবে বলে জানান তিনি। বলেন, এখন যাদের হাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গেছে যাদের না আছে শিক্ষা, না আছে দীক্ষা। তারা শুধু বুঝে কীভাবে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।